ট্রাভেলগ, লিখছেন..দেবন্বিতা চক্রবর্তী:
বাঙালি পর্যটকদের পছন্দের উইকএন্ড ডেস্টিনেশনের মধ্যে বরাবরই থাকে ।
এ রাজ্যের মুগ্ধ করা হাতের কাছের জায়গাগুলো৷ সে রকমই আগামী সপ্তাহান্তের কোনও ছুটিতে দীঘা হতে পারে আপনার বেড়ানোর ঠিকানা।বিশেষ করে আপনি যদি সমুদ্রবিলাসী হন, তাহলে দীঘার নির্জন সমুদ্র ভাল লাগবে নিশ্চয়ই। আর নির্জনতার কাঙাল তো আমরা সকলেই। সেটাও দীঘার সৈকতে৷
“পিন্টু ভট্টচার্যের গান,‘চলো না দীঘার সৈকত ছেড়ে ঝাউবনের ছায়ায় ছায়ায়।’
এখনও ঘুরে বেড়ায় সেই গান মানুষের মুখে মুখে।
গানের ভাষাই বুঝিয়ে দেয় সৈকতসুন্দরীর সেই রূপের কথা।
নবরূপা সৈকতসুন্দরীর ব্র্যাণ্ডভ্যালু
এখন আন্তর্জাতিক। সৌন্দর্যায়নের
ছোঁয়ায় রূপ বেড়েছে বহুগু্ণ। এখানে সমুদ্রতটের একেবারে গা ঘেঁষে থাকার
বন্দোবস্ত রয়েছে। মনে হবে, যেন হোটেল থেকে দু’কদম এগোলেই নোনাজল বালি
ভেদ করে এসে পায়ে ঠেকবে! বেশি ঘোরাঘুরি না করে শুধুই যাঁরা সমুদ্রের মুখোমুখি বসে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চান, তাঁরা বেছে নিন বিচের উপরের সি-ফেসিং কোনও রুম।
তারপর শুধু বঙ্গোপসাগর
আর আপনি! আর মাঝে মাঝে মৎস্যজীবীদের আনাগোনা। পূর্ণিমার সময়ে গেলে রাতের সমুদ্র অপার্থিব! এমনিতেও সমুদ্রের বুকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত কিছুতেই মিস্ করবেন না। সপরিবার যান
কিংবা বন্ধুদের নিয়ে আপনার মন জুড়িয়ে দেবে, সেটা নিশ্চিত! প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। হাতিয়ার সেই ঝাউগাছ। দীঘা–সহ মন্দারমণি, তাজপুর ও শঙ্করপুর, সর্বত্রই ঝাউগাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দীঘা–শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বনদপ্তর এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত। যৌথ উদ্যোগে দীঘা–মন্দারমণি সৈকত বরাবর ২০ কিমি উপকূলে প্রতিবছর লক্ষাধিক ঝাউ এবং আকাশবনি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে
প্রশাসন, যা সৌন্দর্যায়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকূলের ভাঙন রোধে বিশেষ ভূমিকা নেবে বলে
দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের। আপনার চোখ আর মনকে ছুঁয়ে যাবে এই শান্ত ঝাউ পথ। শুধু দীঘা ঘুরে আসার
বদলে হাতে সময় নিয়ে দেখে আসতে পারেন, “বাহিরি দেউল” ইতিহাসের রোমাঞ্চ আছে, চোখ–জুড়োনো প্রকৃতি আছে।
সংস্কারে নতুন রূপ পেয়েছে ৫০০ বছরের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির আর দেউলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। সব মিলিয়ে পর্যটনের নয়া দিশা এখন কাঁথি–৩ ব্লকের বাহিরি। ইতিহাস আর ভূগোলের রসায়নে নতুনভাবে সেজে ওঠা বাহিরির হাতছানিতে সাড়া দিতেই পারেন আপনিও। দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের অভাবে কাঁথি–৩ ব্লকের প্রাচীন জনপদ বাহিরির পাঁচশো বছরের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির ও দেউলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি নষ্ট হচ্ছিল।
পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সংরক্ষণ ও মন্দির সংস্কারের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার দপ্তরের সুপারিশে ৫৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গত জুনে সংরক্ষণ ও সংস্কারকাজ শুরু করেছিল পূর্ত দপ্তর। মন্দির সংস্কার এবং সংরক্ষণের পাশাপাশি সেজে উঠেছে গোটা মন্দির চত্বর। ঐতিহাসিক জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। প্রাচীন এই নিদর্শনগুলিকে ঘিরে ইতিপূর্বে সার্কিট ট্যুরিজম গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল জেলা প্রশাসন এবং পর্যটন দপ্তর।
সেই সার্কিট ট্যুরিজমের অন্যতম অঙ্গ বাহিরির এই প্রাচীন জনপদ। নন্দকুমার–দীঘা ১১৬বি জাতীয় সড়কে কাঁথির আগে মারিশদা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩ কিলোমিটার ভেতরেই অবস্থিত বাহিরী গ্রাম। যেখানে লুকিয়ে আছে কুষাণ, গুপ্ত ও পাল বংশের রাজত্বকালের বহু অজানা কাহিনী। সেই সময়ই বাহিরি শিল্পসৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়েছিল বলে দাবি করেন ইতিহাসবিদরা। এখান থেকে পাওয়া একটি পাথরের মূর্তিও রক্ষিত আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষণাগারে। জগন্নাথ মন্দিরের দুটো ভাগ রয়েছে। একটি মূল দেউল আর অন্যটি জগমোহন নামে পরিচিত। দেউলটি ৫০ ফুট লম্বা আর ২৪ ফুট চওড়া। জগমোহনের উচ্চতা ৪০ ফুট। মন্দিরের অদূরেই রয়েছে প্রাচীন ঝাঁকড়া তেতুঁলগাছ। যা পরিচিত জাহাজবাঁধা তেঁতুলগাছ নামে।