দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সামান্য ভুল হলেই ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে। নিকটআত্মীয় হোক বা সামরিক-অসামরিক কর্মচারী, ফ্লেমথ্রোয়ার দিয়ে একটু একটু করে পুড়িয়ে মারা হয়। কিমের দেশের আইন খুবই কড়া। খবর ছড়িয়েছে, সেই উত্তর কোরিয়াতেই নাকি করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক রোগীকে গুলি করে মেরে দেওয়া হয়েছে। বেজিংয়ের এক সংবাদমাধ্যম থেকে এই খবর সামনে এসেছে, যদিও এই খবরের সত্যতা জানা যায়নি।
বেজিংয়ের ওই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উত্তর কোরিয়াতেও ছড়িয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। কিন্তু সুকৌশলে সেই খবর চাপা দিয়ে রেখেছে কিমের প্রশাসন। এমনকি করোনা আক্রান্ত রোগীকে খুন করার কথাও ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেও উত্তর কোরিয়ার অন্দরমহলে ফি দিন কী ঘটনা ঘটছে সেটা একমাত্র চির প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমের হাত ধরেই গোটা বিশ্বের সামনে আসে। সেখান থেকেই খবর ছড়ায় দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলিতে।
করোনাভাইরাস মহামারীর আকার নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। হু জানাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৫। নতুন আক্রান্ত অন্তত ১৬১ জন। সব মিলিয়ে সংক্রামিতের সংখ্যা ৭৬৩। দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি, বহুদিন ধরেই উত্তর কোরিয়াতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সম্প্রতি চিন ফেরত একজনের মধ্যে নয়া করোনাভাইরাস ‘সিওভিডি-১৯’ সংক্রমণ ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই নাকি তাকে গুলি করে মেরে দেওয়া হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার এক সংবাদমাধ্যমের দাবি, চিন সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার সিনুইজু শহরের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার সংক্রমণে। সেখানে সংক্রামিতের সংখ্যাও অনেক। সংক্রমণ রুখতে চিন সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। চিনের সঙ্গে ওই পথে ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ। কোনও পর্যটক উত্তর কোরিয়ায় পা রাখলে, তাকে ৩০ দিন কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হচ্ছে।
যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা অস্বাকীর করেছে কিমের দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কে কিমের প্রশাসন জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ১৪১ জনকে কোয়ারেন্টাইন করে রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের শরীরে কোনও ভাইরাসের চিহ্ন মেলেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু)রিপোর্ট বলছে, আফগানিস্তান ও বাহারিনেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বাহারিনে একজনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ, কুয়েতে আক্রান্ত তিন জন। চিন থেকে শুরু হলেও গত দেড় মাসে সারা বিশ্বে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার বলে জানাচ্ছে হু। ইরানে রবিবার মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন। ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলছে, এখনই চিনে সংক্রমণ কমার কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। মঙ্গলবারই বেজিং প্রথম জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৫ হাজার মানুষই আক্রান্ত হয়েছেন চিন থেকে। চিনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছে, এই ৪৫ হাজার আক্রান্তের বেশিরভাগেরই সংক্রমণ ছিল মৃদু। আক্রান্তদের অধিকাংশেরই সংক্রমণ প্রাণঘাতী ছিল না। দ্রুত চিকিৎসায় তাঁরা সেরে উঠেছেন। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলেছেন, মানুষের থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বেশি।
একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি। এইভাবে আক্রান্ত হয়েছেন দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ। চিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে গিয়ে চিনে ১৭০০ জনেরও বেশি চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬ জনের।