দেশের সময় ,গাইঘাটা: প্রায় এক সপ্তাহ আগে এক বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির সামনে খুন হন এক ব্যবসায়ী! ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার কাহনকিঁয়ায়। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায়। বিধান সরকার নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, অর্থাৎ শুক্রবার সকালে বিধানের শ্যালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলায় শাড়ির ফাঁস দেওয়া ছিল। তিনি বিধানের বাড়ির কাছেই থাকতেন। বিধানই তাঁকে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছিল পুলিশ। দু’টি মৃত্যুর মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হয় বলে জানান তদন্তকারীরা।
বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান হয়েছিল, পুরনো শক্রতার জেরেই বিধানকে খুন করা হয়েছে। সম্ভাব্য অন্য কারণগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’ ওই মহিলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোও হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরী৷
উল্লেখ্য ,পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মহিষাকাটি মোড়ে বিধানের মাছের খাবার দোকান ও একটি আসবাপত্রের দোকান আছে। এলাকায় একটি বেসরকারি কলেজ করেছিল যৌথ ভাবে। বৃহস্পতিবার রাতে দোকান বন্ধ করে মহিষাকাটি মোড় থেকে বাইক চালিয়ে বিধান একাই বাড়ি ফিরছিল। দুষ্কৃতীরা বাড়ির কাছে লুকিয়ে ছিল। বিধান বাড়িতে ঢোকার মুখে পথ আটকায়। চোখে-মুখে মাফলারে পেঁচিয়ে কুপিয়ে খুন করে। গলার নলি কেটে দেয়। খুনের পদ্ধতি দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় কয়েকজন ছিল।
পুলিশের অনুমান এবং বিশেষ তদন্তের ফলও মিলল হাতে নাতে৷ সূত্রের খবর , মঙ্গলবার সকালে গাইঘাটার শশাডাঙ্গা এলাকা থেকে বিধান সরকার খুনের মূল অভিযুক্ত ধীরেন্দ্র নাথ মন্ডল(হারু ৪৪) কে পুলিশ গ্রেফতার করে এদিনই বনগাঁ মহকুমা আদালতে ধৃতকে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , বিধান খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ধীরেন্দ্র নাথ মন্ডল(হারু ৪৪) জেরায় জানিয়েছে, বাংলাদেশের দু’জন সুপারি কিলার কে ভাড়া করে এনেছিল মোটা টাকার বিনিময়ে।
বিধান সরকারের বিরুদ্ধে, অতীতে খুন,গরু পাচার, মাদক পাচারে নাম জড়িয়েছিল। গাইঘাটা সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গরু পাচার সে নিয়ন্ত্রণ করত বলে অভিযোগ। বিধানের নিজস্ব দলবল ছিল। গাইঘাটা থানায় বিধানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। মামলাগুলি গরু পাচার, সীমান্তে তার কাঁটা কাটা, মাদক পাচার ও আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের। সিআইডির কাছেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।
২০১৬ সালে গাইঘাটা থানার পুলিশ তাকে মাদক এবং প্রচুর গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার করে। তবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে জামিনে ছাড়া পেয়ে দুষ্কর্ম ছেড়ে ব্যবসায় মন দিয়েছিল বিধান। তবে পুরনো পেশার কারণে শত্রুর অভাব ছিল না।
স্থানীয় এবং পুলিশের সূত্র বলছে, বিধান সরকার খুন হওয়ার পিছনে তাঁর শ্যালিকার সাথে দির্ঘদিনের অবৈধ সম্পর্কেরই জের, জানা গিয়েছে অভিযুক্তের মোবাইল ফোনে তেমনই কিছু প্রমাণ মিলেছে পুলিশি তদন্তে ৷