দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কয়েক দিন আগেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন, পশ্চিমবাংলা সরকার কোভিডের সরঞ্জাম ক্রয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। এ ব্যাপারে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও তোলেন তিনি। এই অভিযোগের সামনে কয়েক দিন চুপ করে থাকলেও, সোমবার রাজ্যপালের নাম না করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন নবান্ন থেকে আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “আমাদের সরকার অনেক বেশি ট্রান্সপারেন্সি নিয়ে কাজ করে।” তিনি কেন্দ্রকে বিঁধে জানান, রাজ্য সরকার কত মাস্ক কিনেছে তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ‘কেয়ার’ ফান্ডে কত টাকা জমা পড়েছে, সে প্রশ্ন করতে চান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কত টাকা জমা পড়েছে সেই হিসেবটা আগে দিন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোথা থেকে মাস্ক কিনেছে সেই নিয়ে প্রশ্ন করার আগে এটার উত্তর দিন, করোনা পরীক্ষার জন্য যে এত ভেজাল কিটস বেরোল, সেগুলো আপনারা কোথা থেকে কিনেছিলেন? মাস্ক নিয়ে না ভেবে, নকল পরীক্ষার কিটগুলো নিয়ে ভাবতে হবে আগে।”
একুশের ভোট আসছে। তার আগে কোভিডের সরঞ্জাম কেনা নিয়ে রাজ্যপাল যে দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলেছিলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হয়। এর আগে লকডাউন শুরু হওয়ার সময়ে রাজ্যে রেশন দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন ধনকড়। পরে বাম, কংগ্রেস, বিজেপিও সেই অভিযোগে নবান্নকে বিঁধতে চেয়েছিল। পরবর্তী কালে সুপার সাইক্লোন উমফানের ত্রাণ বণ্টনে ফের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সে ব্যাপারেও নীরব ছিল না রাজভবন। সম্প্রতি কোভিডের সরঞ্জাম কেনা নিয়ে দুর্নীতি চেপে ধরতে চাইছেন তিনি।
তৃণমূল অবশ্য রাজ্যপালকে বিজেপির মুখপাত্র বলে বারবার মন্তব্য করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, উমফানের ত্রাণ বিলিতে এক আধটা যে ঘটনা ঘটেছে তাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে। এবার আর রাজ্যপালের নাম করেননি তিনি, তবে আবারও বললেন, দুর্নীতির ব্যাপারে কেন্দ্রই অনেক বেশি এগিয়ে আছে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোটের আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি এহেন অভিযোগ ওঠা যে শাসক দলের পক্ষে ভাল হচ্ছে না তা বলা বাহুল্য। রাজ্যপালের রাজনৈতিক এজেন্ডা যদি বা থেকেও থাকে, অভিযোগগুলিকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে পারছে না শাসক দল। কোভিড পর্বে লকডাউন শুরু হতেই যে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তা নিয়ে পরে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে দেখা গিয়েছে। উমফানের দুর্নীতির ঘটনাও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এখন কোভিডের সরঞ্জাম কেনা নিয়ে সত্যিই দুর্নীতি হয়ে থাকলে সরকারের অস্বস্তির অন্ত থাকবে না।
বস্তুত এবারেও অভিযোগ ভ্রান্ত প্রমাণের পথে হাঁটলেন না মুখ্যমন্ত্রী। মাস্ক কেনা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার খোঁজ নেওয়ার চেয়ে করোনা পরীক্ষার নকল কিটের দুর্নীতি নিয়ে জবাব দেওয়া অনেক বেশি জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে, পাল্টা অভিযোগের পথে হাঁটলেন।