অর্পিতা বনিক ও সুপ্রকাশ চক্রবর্তী : কেরালার ওয়েনাড় জেলার কালপেটা ব্লকের মধুমালাই জঙ্গল সংলগ্ন বিশাল এলাকা ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত। বহু গ্রাম সম্পূর্ণ রূপে নদীগর্ভে চলে গেছে। শয়ে শয়ে মানুষ নিখোঁজ। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি বহু সংখ্যক বাঙ্গালী, অসমীয়া ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাণহানি হয়েছে। ভারত সেবাশ্রম সংঘের ত্রিবান্দম শাখার পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকা গুলিতে উদ্ধার কাজ ও ত্রান বিতরনের কাজ শুরু হয়েছে। চুরামালা মেপ্পাদি,মুন্ডাকাই, চালিয়ার , পত্তুকালী, নিলামবুর, চাম্বুতারা সহ বিভিন্ন গ্রামে ত্রাণ ও সেবা কাজ শুরু হয়েছে। দেখুন ভিডিও
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রধান সম্পাদক স্বামী বিশ্বাত্মানন্দ মহারাজ বলেন,পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এলাকা অতি দুর্গম হয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে। ধসে আর কাদাতে এখনও বহু জায়গায় পৌঁছানো যাচ্ছেনা। শ্রমিক যারা বেঁচে আছে তাদের কাজ নেই, আশ্রয় নেই পোশাক নেই খাবার নেই। এই মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো অতি প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে সংঘের পক্ষ থেকে আবেদন করা হচ্ছে এই সেবাকাজ চালিয়ে যেতে ও দুর্গত মানুষদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে সকলে এগিয়ে আসুন I
কার্যত ‘মৃত্যুপুরী’ হয়ে উঠেছে ওয়ানাড়। উদ্ধারকাজ যত এগোচ্ছে, ততই যেন আর্তনাদ বাড়ছে। ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০। শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সংখ্যাও বাড়তে পারে। কারণ এখনও বহু মানুষের খোঁজ মেলেনি। শুক্রবারও সকাল থেকে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। আর এবার ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোনও।
মুণ্ডাক্কাই, চূড়ামালা এবং আট্টামালা, ওয়ানাড়ের এই তিনটি গ্রাম সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই সব এলাকায় যৌথ তল্লাশি অভিযানে নেমেছে সেনা, এনডিআরএফ, উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌসেনা। মুন্ডাক্কাই এবং চুরামালায় নিখোঁজদের কেউ বেঁচে নেই বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। যদিও নিখোঁজদের উদ্ধার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কেরলে দুর্যোগ এখনই কাটছে না। কারণ আগামী সোমবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। মূলত, মলপ্পুরম, কোঝিকোড়, কন্নুর এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে। তাই নতুন করে ধস নামার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে উদ্ধারকারী দল একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে উদ্ধারকাজ চালাবে। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিটি দলে তিন জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং বন দফতরের এক জন কর্মী থাকবেন।
ড্রোন নিয়ে নজরদারি ছাড়াও সেনাবাহিনী কেন্দ্রের কাছে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি চেয়ে পাঠাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে এনটিআরও-র রেকো রেসকিউ সিস্টেম এবং রিমোট সেন্সিং ইকুইপমেন্ট। আসলে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে উদ্ধারকাজ চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে তাঁদের পক্ষে।
বৃহস্পতিবারই ভূমিধস কবলিত ওয়ানাড় পরিদর্শন করে আসেন লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত প্রাক্তন সাংসদ রাহুল গান্ধী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোন ও ওয়ানাড় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সম্ভাব্য প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও।