

আজ শনিবার থেকে দিল্লিতে ঢুকতে পারবে না পুরনো বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়ি। যেসব যানবাহন বিএস (BS)–IV মানদণ্ডে পৌঁছয়নি, সেগুলিকে রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দিল্লির পরিবহণ দফতর। এই নিয়ম কার্যকর করতে পরিবহণ দফতর ও ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে যৌথভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ২৩টি এনফোর্সমেন্ট টিম।

পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, দিল্লিতে আসা গাড়িগুলির উপর নজরদারির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ বাণিজ্যিক গাড়ি ২৩টি প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে রাজধানীতে ঢোকে। এই সব জায়গায় ট্র্যাফিক পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত দল মোতায়েন থাকবে। যেসব গাড়ি নির্ধারিত মান পূরণ করছে না, সেগুলিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
দিল্লিতে প্রবেশের ওই ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে কুন্ডলি বর্ডার, রাজোকরি বর্ডার, টিকরি বর্ডার, আয়ানগর বর্ডার, কালিন্দি কুঞ্জ বর্ডার, আউচান্দি, মান্ডোলি, কাপাশেরা এবং দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের বজঘেরা টোল গেট।

প্রতিটি দলের নেতৃত্বে থাকবেন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক। অনুমান করা হচ্ছে, বর্তমানে ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার বাণিজ্যিক গাড়ি বিএস–IV মানের নীচে পড়ে। পরিবহণ দফতর এই বিষয়ে দিল্লি পুরসভার কাছ থেকে সঠিক তথ্য চেয়েছে, তবে নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
এই অভিযান চলবে দিনে দুই শিফটে, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা, এবং রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত।
বিএস–IV মান পূরণ করা পণ্যবাহী ডিজেল গাড়িগুলি ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লিতে ঢোকার অনুমতি পাবে, যা একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত। তবে দিল্লিতে নথিভুক্ত বাণিজ্যিক গাড়ি, বিএস–VI ডিজেল গাড়ি, বিএস–IV ডিজেল গাড়ি (২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত), এবং সিএনজি, এলএনজি বা বিদ্যুৎচালিত গাড়িগুলির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
গত ১৭ অক্টোবর বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ কমিশন (CAQM) জানায়, বায়ুদূষণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে ১ নভেম্বর থেকে দূষণকারী বাণিজ্যিক যানবাহনের দিল্লি প্রবেশে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। এক সিনিয়র ট্র্যাফিক পুলিশ অফিসার জানান, এই ব্যাপারে হরিয়ানা পুলিশের সঙ্গে হাত মেলানো হয়েছে, কারণ গুরুগ্রামের দিক থেকেই সবচেয়ে বেশি গাড়ি দিল্লিতে ঢোকে। দুই রাজ্যের কর্মীরা একসঙ্গে ১২০টিরও বেশি চেকপয়েন্টে মোতায়েন থাকবেন, যাতে বিএস–I, বিএস–II ও বিএস–III গাড়িগুলি রাজধানীতে ঢুকতে না পারে।

ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, বাড়তে পারে জিনিসপত্রের দাম
পরিবহণ ব্যবসায়ী রাজেন্দ্র কাপুর জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামে প্রভাব পড়তে পারে, যার অর্থ সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ! তাঁর মতে, সরকার যদি দূষণ নিয়ন্ত্রণের আরও কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে বের করে, তা হলে শুধু গাড়ি নিষিদ্ধ করাই একমাত্র সমাধান নয়।
দূষণের জের? দিল্লিতে ৭৫ শতাংশ বাড়িতেই একজন শয্যাশায়ী, সমীক্ষায় বাড়ছে উদ্বেগ
দিল্লির হাওয়া এখনও খারাপ। বাতাসে বিষ। চারদিক যেন ঘন কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে রাজধানীর বাসিন্দাদের শরীরে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের প্রতি চারটি বাড়ির তিনটিতে অন্তত একজন করে অসুস্থ। অধিকাংশই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। সঙ্গে জ্বর। এমনিতেই ঋতু পরিবর্তনের মরশুম। তার উপরে বিষাক্ত বাতাসে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড়। দিল্লিতে যেন সুস্থ শরীরে বাঁচা দায়।
দিল্লি, গুরুগ্রাম, নয়ডা, ফরিদাবাদ এবং গাজিয়াবাদের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দার উপরে সমীক্ষা চালায় LocalCircle নামে একটি সংস্থা। সেখানেই দেখা গিয়েছে, গত এক মাসে অসুস্থতার হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ৫৬ শতাংশ পরিবারেই অন্তত একজন করে অসুস্থ ছিলেন। এখন সেই হার বেড়ে ৭৫ শতাংশে পৌছে গিয়েছে।
জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ভিড় জমাচ্ছেন দিল্লিবাসী। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও আচমকা বেড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশ রোগীর শরীরেই বাসা বেঁধেছে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য ভাইরাস। সুস্থ হতে এক সপ্তাহ কেটে যাচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ‘ভাইরাস সবচেয়ে বেশি কাবু করে ফেলছে শিশু ও প্রবীণদের। প্রায় প্রতিটা পরিবারেই কেউ না কেউ অসুস্থ।’
দিল্লির বাতাসের গুণমান এখন ৩৫০-র আশেপাশে। যা দীপাবলির পরে গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন। যদিও ফসল কাটার পরে অবশিষ্ট খড় বা নাড়া পোড়ানোর মাত্রা ৭৭.৫ শতাংশ কমেছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের এটা ছিল অন্যতম বড় কারণ। PM2.5 স্তর (‘Particulate Matter’ বা কণার আকার ২.৫ মাইক্রোমিটার বা তার কম) প্রতি ঘন মিটারে প্রায় ৪৮৮ মাইক্রোগ্রামে পৌছেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত স্তরের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি।

সম্প্রতি বায়ু মানে উন্নতি, তবে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে
শুক্রবার দিল্লির পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৩৭৩ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২১৮-এ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৪টেয় রেকর্ড করা এই পরিসংখ্যান ‘খুব খারাপ’ থেকে ‘খারাপ’ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বৃষ্টি ও জোরালো হাওয়ার কারণে দূষণের মাত্রা কমেছে।



