দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী। কিন্তু ‘মা দুর্গার আশীর্ব্বাদে’ এই প্রবল কঠিন সময়েও আজ বিষ্যুদবার তথা লক্ষ্ণীবারে দুর্গা পুজো কমিটিগুলোর যেন লটারি লেগে গেল। এদিন পুজো কমিটিগুলোকে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মিটিংয়ে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন। বলেন, দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে এ বার ৫০ হাজার টাকা করে দেবে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাদের টাকা নেই পয়সা নেই সেটা ঠিক। তবে পুজো কমিটিগুলো আমি জানি খুব প্রবলেমে রয়েছে। আমাদের একটা স্বল্প দান তো আমরা দিই। দান নয় ভালবাসা। এবার যেহেতু আপনাদের সমস্যা একটু বেশি রয়েছে। এ বার রাজ্য সরকার আপনাদের ৫০ হাজার টাকা করে দেবে প্রত্যেকটা পুজো কমিটিকে”।
শুধু কি তাই! এ বার পুজোয় উপরি বোনাসও পাবে পুজো কমিটিগুলো। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, যে হেতু পুজো কমিটিগুলো খুব সংকটে রয়েছে, তাই এ বছর দমকলকে কোনও ফি দিতে হবে না। পুরসভাও কোনও ফি নেবে না। আর সিইএসসি ও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদও বিদ্যুৎ মাশুলে ৫০ শতাংশ ছাড় দেবে!
২০১৮ সাল পর্যন্ত দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ১০ হাজার টাকা করে দিত নবান্ন। কিন্তু গত বছর অর্থাৎ উনিশ সালে তা এক লাফে দেড়শ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ বারের ঘোষণা অতীতের সব রেকর্ডকেই ছাপিয়ে গিয়েছে।
কতগুলি পুজো কমিটিকে রাজ্য সরকার এ বার চাঁদা দেবে তা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতায় স্পষ্ট করেননি। তবে অতীতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ২৮ হাজার পুজো কমিটিকে এই ‘স্বল্প দান’ দিয়েছিল সরকার। সেই হিসাবে এ বছর স্বল্প দানের জন্য ১৪০ কোটি টাকা খরচ হবে রাজ্য সরকারের।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কোভিডের কারণে রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের থেকে টাকা পাওয়ার আশাও নেই। ফলে আরও ঋণ নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বড় কথা হল, জেলায় জেলায় বহু জায়গায় রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। সম্ভবত অর্থের অভাবেই সে সবের মেরামতির কাজে হাত লাগাতে পারছে না সরকার। এই পরিস্থিতিতে সরকারের টাকার এই খয়রাতির খুব দরকার ছিল কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, একুশের ভোট আসছে। হতে পারে সেই কারণেই এতটা বেপরোয়া তৃণমূল সরকার। কারণ, উনিশের ভোটেই দেখা গিয়েছে বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণ হয়ে গিয়েছে। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর তৃণমূলনেত্রী নিজেই সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন ‘টোটালটা হিন্দু মুসলমান হয়ে গিয়েছে।’ হতে পারে ভোটের আগে সংখ্যাগুরু আবেগকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে শাসক দল।