দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে আন্দোলিত হয়েছিল তৃণমূল। তারপর দলের তরফে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছিলেন, দলের কথা দলেই বলতে হবে। নইলে শৃঙ্খলার প্রশ্নে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে।
সেই পর্ব পেরিয়ে এসে এখন তৃণমূলে দুই বিতর্ক। এক, সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন এবং দুই, পুরনির্বাচনে প্রার্থী কোন্দল। এই দুই বিষয় নিয়েই গত কয়েকদিন যাবৎ তৃণমূল নেতা মদন মিত্রযা যা বলে চলেছেন তাতে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। শুক্রবার সে ব্যাপারে বড় ইঙ্গিত দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মদনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে তৃণমূল।
জানা গিয়েছে, শুক্রবারই মদন মিত্রকে শোকজ করতে চলেছে শাসকদল। তবে এ ব্যাপারে মদনের এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, কখনও ফেসবুক লাইভে, কখনও সংবাদমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক বোমা ফাটাচ্ছেন তৃণমূলের ‘কালারফুল’ বিধায়ক মদন মিত্র । দলের প্রথম সারির নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে কার্যত ধেয়ে আসছে সেইসব মদন-বাণ!
সূত্রের খবর, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের এই ভূমিকায় খুশি নয় দল। তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, কারণ দর্শানোর নোটিস ধরানো হতে চলেছে মদন মিত্রকে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মদন মিত্র বলেছিলেন, “আমার তো অভিষেকের মুখটা খুব ভাল লাগে। এই দলে মমতাদির পর অভিষেকের মুখ ছাড়া আর তো কারও মুখ আমার অত ভাল লাগে না। কেউ গোটা, কেউ মোটা, কেউ সোটা ভাল লাগে না।” সূত্রের খবর, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এইভাবে ‘কাদা ছোড়া’ ভালভাবে নিচ্ছে না দলীয় নেতৃত্বই। সে কারণেই ‘বেপরোয়া’ মদনকে শো কজ করা হচ্ছে।
পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে শুরু থেকেই তৃণমূলের অন্দরে নানা ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা যায়। কামারহাটির প্রার্থী তালিকা নিয়ে সরব হন খোদ এলাকার বিধায়ক। মদনের দাবি, তাঁকে না জানিয়ে প্রার্থী তালিকা ঠিক করা হয়েছে। যা খুবই অসম্মানের। এ নিয়ে দলীয় সাংসদ সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেও কথা বলেন তিনি।
কামারহাটির প্রার্থী তালিকা নিয়ে সাংসদ সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন মদন। এও বলেছিলেন, ওই নেতা বিটি রোড দিয়ে গেলে কামারহাটির মানুষ বুঝে নেবে। শুধু তাই নয়, দমদমের সাংসদকে নাম না করে ক্ষমতার দালাল বলেও তোপ দেগেছিলেন কামারহাটির বিধায়ক। মদন এও বলেছিলেন, দলে এজেন্সি ঢুকে লেনাদেনা করে সব ঘেঁটে দিচ্ছে। তা ছাড়া গতকাল আসানসোলে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে তৃণমূলের বর্তমান রসায়ন নিয়ে যা যা বলেছিলেন মদন সেটাকেও ভাল ভাবে নেয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রথম থেকেই তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছিল, এ ধরনের মন্তব্যে দল নজর রাখছে। প্রয়োজনমতো রাশ ধরবে। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার মদন মিত্র বর্ধমানে ভোট প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আবেগের বহর বোঝাতে দলের বাকি নেতাদের চেহারা নিয়ে যেভাবে কথা বলেন তা একজন জননেতার পক্ষে কখনওই শোভন নয় বলেই দলের একাংশের মত। বিষয়টি শুধু শোভনীয়তার সীমা লঙ্ঘন করেছে তেমনটাই নয়, দলের শৃঙ্খলা ভাঙারও সামিল বলেই মনে করছে দল। সূত্রের খবর, শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এ নিয়ে মদনের কাছে কৈফিয়ত তলব করতে পারে।