দেশের সময়:আপাতাত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।করোনার মারণ আক্রমণ প্রতিহত করতে এটা জরুরি ছিল বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু।
ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে একতরফা গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছেন,কোন রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোন রকম আলাদাভাবে মৌখিক আলোচনা না করেই তাতে দেশের সংবিধানের রীতিকে তিনি লঙ্ঘন করেছেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছেন রাজ্য গুলির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যেহেতু রাজ্য সরকারের তাই জরুরি ভিত্তিতে সেখানকার যাবতীয় জনজীবন সরকারি ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় অচল করে দেওয়া যায় না।এক্ষেত্রে অবশ্যই মৌখিকভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল।সেটা না করে থাকলে সেটা সংবিধানের রীতিকে লঙ্ঘন করা হয়।
দেশের বিপদের কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর একতরফা ঘোষণা নিয়ে কেউ প্রশ্ন না করলেও বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু রাজ্য চর্চা করতে শুরু করে দিয়েছে।রাজ্য সরকার গুলির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল সংবিধানের রীতিকে মান্যতা দিয়ে সিদ্ধান্তটি সহমতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করা।
তা না করে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে একতরফা গোটা দেশে নাকাবন্দি জারি করেছেন তা এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব।এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার নাকি আগামী মাসের ৭ তারিখের পর আবার হু এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে দেশে লকডাউনের সময়সীমা বাড়াতে পারে।এমনটাও শোনা যাচ্ছে গোটা এপ্রিল মাস জুরেই গোটা দেশে লকডাউনের ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
মানুষ ক্রমশই মোরিয়া হয়ে উঠতে শুরু করেছে।কেন্দ্রীয় সরকার গরিব মানুষের জন্য কোন ব্যবস্থা না করে যে ভাবে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে তাতে একটা অংশ তাদের পর যে ক্রমশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
আর এই পরিপ্রেক্ষিতে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত যদি বিনা বিচারে মেনে নিয়ে বার বার কেন্দ্রের চাপিয়ে দেওয়া লকডাউনকে মান্যতা দিতে থাকেন তা হলে যে তার বিজেপি বিরোধী ইমেজ ধাক্কা খাবে তা বুঝেই মমতা এবার বিজেপির একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
রাজ্যবাসীর করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা আটকাতে মমতা একেবারে পথে নেমে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের যে ইমেজ গড়ে তুলেছেন শুধু মাত্র ভাষণবাজি করে সেই ইমেজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার যে চেষ্টা প্রধানমন্ত্রী করছেন মমতা তা কিছুতেই হতে দেবেন না বলে খবর।আর তাই এবার দেশের সংবিধান না মেনে একতরফা গোটা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত হলে এ রাজ্যে তা মানা হবে কি না তা নিয়ে সংসয় তৈরি হয়েছে।
কেউ কেউ ্অবশ্য বলছেন প্রধানমত্রীর সিদ্ধান্ত না মানলে যদি রাজ্যে করোনা ভাইরাসের আক্রমম বড় হয়ে দেখা দেয় তবে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না,সে ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যে করোনার বিপদ ডেকে আনার অভিযোগ উঠতে পারে।তাই এইসব মাথায় রেখে মমতার পক্ষে এখনই কেন্দ্রের বিরুদ্দে কড়া কোন অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়।তবে আবার এটাও ঠিক কেন্দ্র যে ভাবে যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অস্বীকীর করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা যদি সবার নজরে না আনার চেষ্টা হয় তা হলে করোনা প্রতিহত করার যাবতীয় কৃতিত্ব কেন্দ্রীয় সরকারই দাবি করে বসতে পারে।
তাই সব মিলিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের ঠান্ডা লড়াই এই বিপদের সময়তেও জারি রয়েছে।এ রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষের যা আর্থিক সগতি তা দিয়ে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকা যায় না,তাই লকডাউনের সময় ১৪ এপ্রিলের পর আর বাড়লে মানুষ তা কতটা মেনে তিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
এমতবস্থায় কেউ কেউ মনে করছে রাজ্য সরকার সেক্ষেত্রে আংশিক লকডাউনের প্রস্তাব দিতে পারে।তবে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলেচনা করে গোটা দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।মমতার দাবি সেক্ষেত্রে হতে পারে রাজ্যকে না জানিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
এখন প্রধানমন্ত্রী ভাষণ ও নাটকবাজী করে যতোই মহান সাজার চেষ্টা করুন না কেন দায় তাঁর কাঁধে চেপেই গেছে,মানুষ তা বুঝতে পারছে.মানুষের কাছে সেটা আর বেশী করে বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব মমতা নেবেন কিনা তা আর কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে।
তবে এখন যা পরিস্থিতি তাতে ১৪ এপ্রিলের পর লকডাউন বাড়াতে গেলে এ রাজ্য আর তা বিনা প্রশ্নে মেনে নেবে কি না তা নিয়ে ঘোর সংশয় থাকছে।এখন দেখার মোদী- মমতার নতুন কোন ডুয়েল এই করোনা সংক্রোমণ মোকাবিলা করা নিয়েও সামনে চলে আসে কিনা।
মুখে যতোই সবাই বলুন না কেন এখন রাজনীতি করার সময় নয় আসলে এঁরা সকলেই তো রাজনীতিকই,রাজনীতির লাভ-লোকসানের হিসেব ছাড়া এঁরা থাকবেনই বা কি করে?