একুশে সংখ্যালঘু মহাজোটের চেষ্টা : ওয়াইসি-আব্বাস সিদ্দিকি বৈঠক, কপালে ভাঁজ তৃণমূলের

0
1647

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার সকাল। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির বাড়িতে পৌঁছে গেলেন মজলিস-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন তথা মিমের সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।


ওয়াইসি আগেই জানিয়েছিলেন, জানুয়ারিতে বাংলায় আসবেন তিনি। কিন্তু আব্বাসের বাসভবনে তাঁর উপস্থিতি অর্থবহ বলেই মনে করা হচ্ছে। এই দুই সংখ্যালঘু নেতাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী। আগে আব্বাস স্থির করেছিলেন পৃথক দল করে একুশের ভোটে লড়বেন। কিন্তু সূত্রের মতে, ওয়াইসি চাইছেন আব্বাস তাঁর দলেই যোগ দিন। গত পাঁচ বছরে হায়দরাবাদের গণ্ডি পেরিয়ে মিম এখন প্রায় সর্বভারতীয় পার্টি হয়ে উঠেছে। সংখ্যালঘুদের আওয়াজ সংসদে জোরালো ভাবে রাখতে গেলে সমষ্টিগত প্রয়াস দরকার। আব্বাস মিমে যোগ না দিলেও যাতে একুশের ভোটে বাংলায় সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর মহাজোট হয় সেই চেষ্টায় রয়েছেন ওয়াইসি।

গত মাসেই বাংলার চার জেলা থেকে চব্বিশ জন সংখ্যালঘু নেতা হায়দরাবাদে গিয়ে ওয়াইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্থির হয়, সম্ভাব্য কত আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে তা নিয়ে যেন এখন থেকে সমীক্ষা করা হয়। তার পর পরই একদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মন্তব্যের বিরোধিতা করে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন ওয়াইসি।

উত্তরবঙ্গের এক সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, “সংখ্যালঘুদের ভোট ভাগ করার জন্য একটা হায়দরাবাদের পার্টি ডেকে এনেছে। সেই পার্টিটা এখানে কয়েকটাকে জোগাড় করেছে। বিজেপি ওদের টাকা দেয়। বিহারেও ওরা তাই করেছে। ওরা বিজেপির বি-টিম।”

তার বিরোধিতা করে মিম প্রধান বলেন,”ওয়াইসিকে টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারে এমন বান্দার এখনও জন্ম হয়নি। আমায় কেউ কিনতে পারবে না।” তিনি এও বলেন, “সংখ্যালঘু ভোট কারও জমিদারি নয়! এত দিন আপনি শুধু মীরজাফরদের দেখেছেন। যাঁরা আপনার অনুগত হয়ে ছিলেন এবং শুধু নিজেদের কথাই ভেবেছেন। কিন্তু মুসলিমদের কথা আপনি আদতে ভাবেননি। তাঁদের প্রকৃত উন্নয়ন করেননি।”


স্বভাবগত ভাবেই আব্বাস ক্ষুরধার। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় অহোরাত্র মুখর। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা যেমন দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আবার ওয়াইসি সংখ্যালঘুদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনিও নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উগ্র বিরোধী। তাঁর মোদ্দা বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চেষ্টা দেশের কোনও রাজনৈতিক দলই করেনি। শুধু তাঁদের ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা হয়েছে। বাংলাতেও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে, তা কেবলই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি।


এই দুই সংখ্যালঘু শক্তি একজোট হলে শাসক দলের সংখ্যালঘু জনভিত্তিতে ভাগ বসাতে পারে এমন আশঙ্কা ও সম্ভাবনার কথা অনেকেই বলছেন। তবে মিম নেতাদের বক্তব্য, তাঁদের উদ্দেশ্য শুধু ভোট কাটুয়া পার্টি হিসাবে পরিচিত লাভ নয়। ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বিপুল। অথচ আইনসভায় তাঁদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নেই। সেই কারণেই সর্বভারতীয় স্তরে সংখ্যালঘুদেরও এবার একজোট হওয়ার সময় আসন্ন।

অনেকটা একই অভিযোগ তুলেছে বাম, কংগ্রেসও। তাদের দাবি, যখন বিজেপি বিপদে পড়ে, তখন মিম কাজে নেমে পড়ে।

তবে ওয়াইসির বক্তব্য, সংখ্যালঘু ভোট কারও জমিদারি নয়। আর এমন কেউ তৈরি হননি যিনি তাঁকে টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারবে। এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তাঁর দল লড়বে বলে আগেই জানিয় দিয়েছিলেন তিনি। তবে কতগুলি আসনে লড়বে মিম, সে ব্য়াপারে একনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

দিন কয়েক আগে তৃণমূল দাবি করেছিল, মিম-এর বড়সড় কয়েকজন নেতা তাদের দলে যোগ দিয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ মিম। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতারা জেলায় জেলায় তাদের দলে যোগ দিচ্ছেন বলে দাবি করেছে মিম। বিভিন্ন জেলায় সভা, কর্মিসভা শুরু করে দিয়েছে তারা।

Previous articleদেশেই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে,প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে গর্বের : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
Next articleবাঙালি মুসলমান আব্বাসের নেতৃত্বেই বাংলায় মিম চলবে: ঘোষণা ওয়াইসির

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here