একটানা জল ছাড়ছে ডিভিসি, উপকূলবর্তী এলাকায় আশঙ্কা বাড়ছে বন্যার,বন্যার আশঙ্কা বাংলার চার জেলায়!আগাম সতর্কতা নিল রাজ্য

0
195

ফের আতঙ্কে দামোদর নদের তীরবর্তী এলাকাগুলি। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) মঙ্গলবার সকাল থেকে পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে।

বর্ষা এলেই গুসকরা, মঙ্গলকোট, আউশগ্রামের বাসিন্দাদের ঘুম কেড়ে নেয় কুনুর নদী। প্লাবিত হয় কৃষি জমি, জল গিলে ফেলে বসত। গুসকরা শহর চলে যায় জলের নীচে। ফসল নষ্টের কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চাষিদের।

গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘কুনুর আমাদের কাছে একটা জ্বলন্ত সমস্যা। গোটা নদীর ড্রেজিং প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানিয়েছি৷ তবে কুনুরের ড্রেজিংয়ের জন্য চাই বিপুল অর্থ। একটি জায়গা ধরে নদীর ড্রেজিং হলে বিপদ আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে নদীর উৎসস্থল থেকে মোহানা পর্যন্ত ড্রেজিং করতে হবে।’

চলতি বছরে দু’বার কুনুরের জলে প্লাবিত হয়েছে গুসকরা শহর। সিলুট, বসন্তপুরের বহু চাষির জমির ধান, ফসল নষ্ট হয়েছে। আউশগ্রামের কালিদহ যাওয়ার রাস্তা ভেঙে গিয়েছিল জলের তোড়ে৷ গুসকরা শহরও প্লাবিত হয়েছে।
বহু বাড়ি হয়েছে জলমগ্ন। অনেকেই ত্রাণশিবিরে রয়েছেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীর ড্রেজ়িং হয়নি, ধীরে ধীরে নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে৷ সংস্কার না–হলে আগামী দিনে আরও বড় সমস্যা হবে।

গুসকরা সার্কেলের সেচ দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সামসুল হকের মন্তব্য, ‘কুনুরের সংস্কার প্রয়োজন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। তা ছাড়া গুসকরা শহরের রটন্তী কালীমন্দিরের কাছেও কুনুরের ভাঙন রোধে সংস্কারের কাজ করা হবে। তার জন্য ৪৫ লক্ষ টাকার ডিপিআর পাঠানো আছে।’

সূত্রের খবর, এদিকে সকাল ৬টা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হবে। এর মধ্যে পাঞ্চেত থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিউসেক এবং মাইথন থেকে প্রায় ৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টি চলছে। সেখানকার জলাধারগুলি টইটম্বুর। দামোদরের মাধ্যমে বাড়তি জল দুর্গাপুর ব্যারেজ় হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার দিকে। ফলে দামোদরের তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডিভিসি-র জল ছাড়ার ফলে ইতিমধ্যে হুগলির খানাকুল, আরামবাগ এবং হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরের মতো এলাকাগুলি প্লাবিত হওয়ার মুখে। রাজ্যের সেচ দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, দুর্গাপুর ব্যারেজ়ে জলের চাপ বাড়লে সেখান থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

অন্য দিকে, ডিভিসি সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ, ধানবাদ, বোকারো-সহ উচ্চ দামোদর উপত্যকায় টানা বৃষ্টির কারণে পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারে জলস্তর বেড়েছে। ওই অতিরিক্ত জল নিয়ন্ত্রণের জন্যই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দশটি জেলার প্রশাসনকে পরিস্থিতির উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্লাবিত এলাকাগুলিতে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে সক্রিয় করা হয়েছে। হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমানের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।

রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তর ইতিমধ্যে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারেজে জলের চাপ বেড়ে চলেছে। সেচ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী সেখান থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। ডিভিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ, ধানবাদ, বোকারো সহ উচ্চ দামোদর উপত্যকায় টানা বৃষ্টির ফলে পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারের জলস্তর অনেকটাই বেড়েছে। সেই অতিরিক্ত জল নিয়ন্ত্রণ করতেই এই জল ছাড়া হয়েছে।

তবে ডিভিসি-র জল ছাড়া নিয়ে কয়েক দিন ধরে বিতর্ক চলছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগাম আলোচনা না-করে জল ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগেও মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসি-র ‘একতরফা জল ছাড়ার’ সমালোচনা করেছেন। ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যাকে ‘মানুষের তৈরি বন্যা’ বলে অভিহিত করেন তিনি। পাল্টা ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা জল ছাড়ার জন্য যে নির্দেশ পান, সেইটুকু জল ছাড়েন। আর এই নির্দেশ দেয় জল ছাড়ার জন্য যে কমিটি রয়েছে, তারা। ওই কমিটিতে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষ-সহ কেন্দ্রীয় ওয়াটার কমিশনের প্রতিনিধিরা। জলাধারে জল এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখে কমিটি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, কতটা জল ছাড়া উচিত। সেই সিদ্ধান্তের কথা ডিভিসি-কে জানালে তারা নির্দেশ মাফিক কাজ করে। তাই দোষারোপ অযৌক্তিক।

এদিকে জল ছাড়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় রাজ্য প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ইতিমধ্যেই ১০টি জেলার জন্য ১০ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব নিযুক্ত করেছেন। যাতে পরিস্থিতির ওপর সরাসরি নজর রাখা যায়। হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার নিম্নাঞ্চলগুলিতে ত্রাণ এবং উদ্ধারকার্য চালাতে জেলা প্রশাসনকে তৎপর থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনের কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে নবান্ন।

Previous articleBREAKING NEWS for Photographers! PSN Photography Contest 2025 submit your entry now!
Next articlePSN Photography Contest 2025! পিএসএন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন কি ভাবে ? রইল বিস্তারিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here