পিয়লী মুখার্জী, কলকাতা: প্রথম স্থানাধীকারীর পরিচয় দিতে গিয়ে ধর্মের কথা উল্লেখ, পরীক্ষা না হওয়া সত্ত্বেও ফলপ্রকাশের পর থেকে একাধিক জায়গায় পড়ুয়াদের বিক্ষোভ, মূলত এই দুই কারণের জেরেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি পদ থেকে অপসারিত করা হল মহুয়া দাসকে। তাঁর জায়গায় সংসদের নতুন সভাপতি হলেন যাদবপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর থেকে রাজ্যজুড়ে ছাত্র বিক্ষোভ এবং তারপর রাজ্য সরকারের ঢোঁক গেলার মধ্যে দিয়েই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত শুক্রবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির পদ থেকে সরানো হল মহুয়া দাসকে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। মাধ্যমিকে ১০০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীকে পাশ করিয়েছে রাজ্য সরকার। তারপর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হবে। কিন্তু দেখা যায় ৯৭ শতাংশের কিছু বেশি সংখ্যক ছেলে-মেয়ে পাশ করে। বাকি আড়াই শতাংশের মতো ছাত্রছাত্রী অকৃতকার্য হয়। এরপরই শুরু হয় রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ।
বিতর্ক বাড়ছিল উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকেই। এমনকী রাজ্যজোড়া বিতর্ক ও সরকারের অভ্যন্তরে কঠোর সমালোচনার পর নিজেই শিক্ষা সংসদের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন মহুয়া দাস। যা নিয়ে পর্যালোচনা চলছিল সরকারি মহলেও। অবশেষে অপসারিতই হয়ে গেলেন মহুয়া দাস। এবার সেই জায়গায় নতুন দায়িত্বে এলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পায় মুর্শিদাবাদের কান্দির রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র গার্লস হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী রুমানা সুলতানা। কিন্তু ফল ঘোষণার সময় তার নাম না করে বারবার রুমানার ধর্মের উল্লেখ করতে দেখা যায় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তদানন্তীন সভাপতি মহুয়া দাস।
এমনকী রাজ্যের প্রথম স্থানাধিকারীকে বারবার মুসলিম বলে উল্লেখ করাতেও বাড়ে চাপ, তৈরি হয় রাজ্য জোড়া বির্তক। মহুয়া দাসের পদত্যাগেরও দাবি করেছ পশ্চিমবঙ্গের ইমাম অ্যাসেসিয়েশন।
প্রশ্ন ওঠে মহুয়া দাসের সচেতনতা ও মানবিক বোধ নিয়েও। যদিও পরে ক্ষমা চেয়ে বিতর্কে জল ঢালারও চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু এই ইস্যু শাসক তৃণমূলের উপর লাগাতার চাপ সৃষ্টি করতে থাকে বিরোধীরা। মাঠে নামে সিপিএম, কংগ্রেসও। প্রশ্ন ওঠে, মেধার বিচারে কোনও পড়ুয়ার ধর্মীয় পরিচয় এতটা প্রাধান্য পায় কি করে? আর তারপরেই শোনা যায় শীঘ্রই সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন মহুয়া দাস।
যদিও সূত্রের খবর, বর্তমানে তাকে অপসারিতই করেছে রাজ্য সরকার। এদিকে এবার মহুয়া দাসের জায়গায় এই পদে বসতে চলেছেন যাদবপুরের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। এদিকে যাদবপুরের সাম্প্রতিক ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গেই বারেবারে একযোগে উচ্চারিত হয়েছে চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের নাম। এমনকী ক্লাসের রোজকার শিক্ষা হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন সমস্যা, ছাত্র আন্দোলন সামলানো হোক বা প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, বরাবরই দক্ষ হাতে সমস্ত কাজ সামলেছেন ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ এই বর্ষীয়ান শিক্ষাবিদ। এবার সরাসরি শিক্ষা দফতরের এই গুরু দায়িত্ব তিনি কেমন সামলান এখন সেটাই দেখার।