পার্থ সারথি নন্দী: এবারে আর ইনা, মিনা ডিকাকে ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে যাবে না জয়া মন্ডল। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসার খবরে বাড়ির অন্যরা বিচলিত হলেও জয়া কিন্তু তার সিদ্ধান্তে অবিচল।
জয়া এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে৷ গত বছর আমফানের সময় বনগাঁর ছয়ঘরিয়া বিভূতিভূষণ বিএড কলেজে আশ্রয় নিয়েছিল সে এবং তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বাড়িতে রেখে যেতে হয়েছিল ইনা, মিনা, ডিকাকে। আসলে এরা হল জয়ার পোষ্য বেড়াল। অস্থায়ী আশ্রয়ে থেকে দিন কাটলেও মন পরেছিল বাড়িতেই। সেখানে তার পোষ্যরা কেমন আছে, তা নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তায় ছিল জয়া। তাই এবারে ফের ঝড় আসার খবরে বাড়ি ছাড়ার প্রসঙ্গ উঠতেই জয়া সিদ্ধান্ত নেয় যে এবারে আর পোষ্যদের ছেড়ে, তাদের বিপদের মুখে ফেলে নিজে অন্যত্র যাবে না সে।তাই তার ঘরেই তাঁদেরকে সাবধানে রেখে,বারবার তাঁর প্রিয় পোষ্য বেড়ালদের উদ্দ্যেশ্যে সে বলেই চলেছে ‘ইয়াস নিয়ে ভয় নেই আমি আছি…’ অন্যদিকে-
দক্ষিণ ছয়ঘরিয়া মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা বছর ৭২ বয়সের রঞ্জিৎ বারুই, নিখিল সিকদারেরা গতবার আমফানের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সরকারি আর্থিক সাহায্য পেলেও এবারে ফের চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। এবারের ঝড়ে কি পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেই চিন্তাতেই দিন কাটছে তাঁদের।
ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ঘূর্ণিঝড় যশ এর মোকাবিলায় পঞ্চায়েত অফিসে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। শুকনো খাবার, প্রায়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজে আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে।
বনগাঁর পাশাপাশি হাবরা, অশোকনগর এলাকাতেও প্রস্তুত প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ওইসব এলাকার বিপদজনক অবস্থায় থাকা মানুষদের পাকা বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বিপদজনক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে দিনের দ্বিতীয় সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়:
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িতেই থাকুন। এদিন সন্ধে ৬টার সাংবাদিক বৈঠকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে আরও তথ্য দেবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় টর্নেডোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই সাবধানে থাকুন।’’
ইয়াস প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে নবান্নে রাজ্যপাল:
ইতিমধ্যেই নবান্নের কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতে সেখানেই থেকে গোটা রাজ্যের ইয়াস পরিস্থিতির উপর চোখ রাখবেন তিনি।
জানা গিয়েছে, নবান্নের কন্ট্রোল রুমে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই পরিদর্শনে যান জগদীপ ধনখড়। সন্ধ্যায় যৌথ সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন তাঁরা। এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে। এদিন হাওয়া অফিস পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চিন্তা বাড়াচ্ছে।’ এর মধ্যেও রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসার সমস্যা নিয়ে সরব হন তিনি।
মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিবিধির খবর নিতে আবহাওয়া দফতরে পৌঁছে যান রাজ্যপাল। দীর্ঘক্ষণ হাওয়া অফিসের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ইয়াসের বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে জেনে নেন। রাজ্যপাল জানান, তিনি প্রতিমূহূর্তে ইয়াস পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এমনকী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর থেকেও খবর নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘিরে উদ্বেগে বাংলা। শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে পৌঁছবে ইয়াস। রাজ্যের মধ্যে ঝড়ের মুখে সবচেয়ে বেশি পড়বে পূর্ব মেদিনীপুর। বুধবার সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪৫ কিমি। তবে, কলকাতায় ঝড়ের দাপট তুলনায় কম হবে। কলকাতায় আমফানের মতো পরিস্থিতি হবে না বলে জানিয়ে দিলেন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, আমফানের মতো আতঙ্কের দরকার নেই।
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই নবান্নে কন্ট্রোল রুমে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও এসেছিল সেই কন্ট্রোলরুমে। তার পর এখন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী: এক নজরে–
হালিশহরে দেড় মিনিটের জন্য টর্নেডো হয়েছে। চল্লিশটা বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার পাঁচ জন সামান্য আহত হয়েছে।
পাণ্ডুয়ায় তড়িদাহত হয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চুঁচুড়াতেও একটা টর্নেডো হয়েছে। সেখানেও কিছু বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখন লেটেস্ট পূর্বাভাসে বলছে সাগরেও হিট করতে পারে ঘূর্ণিঝড়। সবাই সাবধানে থাকবেন।
ঘূর্ণিঝড়ের জন্য এলাকায় এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে টর্নেডো হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতির জন্য মানুষকে বলব চিন্তা করবেন না। ঝড়টা কাটুক। তার পর আমরা আছি।
ল্যান্ডফল হওয়ার পরেও ২-৩ ঘণ্টা এফেক্ট থাকবে। তাই সাবধানে থাকতে হবে।
আবহাওয়াবিদরা যা বলছেন, তা বিশ্বাস করে সতর্ক থাকতে হবে।
বড় ঘটনা ছাড়া রাতে আপনাদের বিরক্ত করব না। আতঙ্কিত করার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই। রাতে আমরা এখানেই থাকব।