

যুবনেতা ওসমান হাদির মৃত্যুর পরে গোটা বাংলাদেশে যখন চরম অরাজকতা চলছে, সেই সময়ে সামনে এল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিয়ো। অডিয়োটি একটি ভার্চুয়াল বক্তৃতার অংশ হলেও কবে তিনি কথাগুলি বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়।

কারণ, ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’ সংবাদপত্রের দপ্তরে লুটপাট করে আগুন দেওয়া, শেখ হাসিনারই উদ্যোগে তৈরি ‘ছায়ানট’-এর দপ্তর ও প্রেক্ষাগৃহ পুড়িয়ে ছারখার করা, ‘উদীচী’র দপ্তরে আগুন দেওয়া বা ধানমন্ডির বাড়িতে ভাঙচুরের মতো সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও বলা হয়নি এই বক্তৃতায়।
হাসিনার বক্তব্য, ‘আমার সময়ে ৪ কোটিরও বেশি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে আনা হয়। সেই সব প্রচেষ্টা ধ্বংস করেছেন ইউনূস। এই আমলে ৬ কোটি মানুষ নতুন করে জীবিকাহীন হয়েছেন।’ তবে হাসিনার প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘আল্লা যখন আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন, আমি আবার ফিরব বাংলাদেশে। নতুন বাংলাদেশ, সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করব।’

হাসিনা সরকারের প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি আরাফাত তাঁর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে শনিবার এই অডিয়োটি প্রকাশ করেছেন। রবিবার তার লিঙ্ক ফেসবুকে পোস্ট করেন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এর ফলে অডিয়োটি ভুয়ো নয় বলেই মনে করা হচ্ছে, তবে কবেকার, সেটা স্পষ্ট নয়।
এই বক্তৃতায় শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছেন। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দুষ্কৃতীরা সাধারণ মানুষের উপরে নির্যাতন চালাচ্ছে। গোটা বাংলাদেশে আওয়ামি লিগের সমর্থক এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের উপরে ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। তাঁদের খুন করা হচ্ছে, সরকার হাত গুটিয়ে বসে।

হাদির মৃত্যুর পর জ্বলছে বাংলাদেশ । মৌলবাদী দাপট, সংখ্যালঘু খুন, রাষ্ট্রযন্ত্রের অসহায়তা-সব মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি এখন ভয়ংকর বলেই মনে করছেন অনেকে। এই আবহে মুখ খুললেন দেশত্যাগী বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । সরাসরি আঙুল তুললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের দিকে। তাঁর সাফ অভিযোগ, বাংলাদেশ আজ যে অরাজকতার পথে হাঁটছে, তার সম্পূর্ণ দায় ইউনুস সরকারেরই।
ভারতের জাতীয়স্থরের এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, যুবনেতা শরিফ ওসমান হাদি -র মৃত্যু এবং সেই ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া হিংসা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমার নির্বাচিত সরকারের পতন হয়েছিল অরাজকতা বেড়ে যাওয়ায়, সেই অরাজক অবস্থাই হাদির মৃত্যুর জন্য দায়ি। ইউনুসের আমলে সেই অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। এখন বাংলাদেশে হিংসা তো রোজকার ঘটনা। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সব কিছু অস্বীকার করছে, কারণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।”

শুধু দেশের ভিতরের পরিস্থিতিই নয়, ইউনুস জমানায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাসিনা। তাঁর অভিযোগ, “ইউনুস প্রশাসন লাগাতার ভারতবিরোধী বয়ান দিচ্ছে। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। চরমপন্থীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিদেশনীতি কার্যত ওরাই ঠিক করে দিচ্ছে।”
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতকে পরম বন্ধু মনে করেন। আজ নয় বহু দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। যা কোনও অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়েও বেশি স্থায়ী। সঠিক শাসনব্যবস্থা ফিরে এলে গত ১৫ বছরের বোঝাপড়া ও অংশীদারিত্ব আবারও ফিরবে বলেই তাঁর বিশ্বাস।
বাংলাদেশে বাড়তে থাকা মৌলবাদ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন হাসিনা। বলেন, “ইউনুস শাসনে মৌলবাদীদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত সন্ত্রাসীরা জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছে। জামাত-ই-ইসলামি -র উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”

এখানেই থামেননি তিনি। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে তাঁর মত, শুধু ভারতের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার পক্ষে বড় হুমকি বাংলাদেশের এই অবস্থা।
বৃহস্পতিবার রাতে সৌদি আরবের হাসপাতালে মৃত্যু হয় ইনকিলাব মঞ্চ -র মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির। ওই দিন রাত থেকেই বাংলাদেশে হিংসা চরম আকার নিয়েছে। বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং হিংসার জেরে সংবাদ মাধ্যম বা ছায়ানটের মতো সংস্থাও আক্রান্ত।

এদিদকে, এই হিংসার জেরে পিটিয়ে মেরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সংখ্যালঘু হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে । ময়মনসিংহের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা দীপু গত দু’বছর ধরে ভালুকার একটি কারখানায় কাজ করতেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ একদল বিক্ষোভকারী কারখানায় চড়াও হয়। ভাঙচুরের পর দীপুকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে এনে মারতে শুরু করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। পরে দেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় সড়কে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে আগুন ধরানো হয়। দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকে রাস্তা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।



