অষ্টমীর শেষ, নবমীর শুরু। ৬০-৬১ বেনে পুকুর সার্বজনীনে সন্ধিপুজোর মুহূর্ত ধরা পড়ল চিত্রগ্রাহক ধ্রুব হালদারের ক্যামেরায়।রীতি মেনে হল সন্ধিপুজো।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে, অষ্টমী তিথি আরম্ভ ২৫ আশ্বিন, মঙ্গলবার। রাত ১টা ৪৬ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। অষ্টমী তিথি শেষ– ২৬ আশ্বিন, বুধবার। রাত ১১টা ৪৭ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড।
সন্ধিপুজো রাত ১১টা ২৩ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড থেকে ১২টা ১১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড মধ্যে সম্পন্ন হয়৷
দুর্গাপুজো ২০২১: সন্ধিপুজোয় ১০৮ টি পদ্মের মাহাত্ম্য কী! একনজরে দেখে নেওয়া যাক পুজোর আচার , নিয়ম
সন্ধি পুজোর নিয়ম
অষ্টমীর শেষে ও নবমীর শুরুতে যে সন্ধিক্ষণ থাকে সেই সময়ই পালিত হয় সন্ধিপুজো। পুরাণ মতে, এই সন্ধিপুজোর কালেই অষ্টমী ও নবমীর মাঝের লগ্নে দেবী দুর্গা অসুরকে দমন করেন। আর সেই কারণেই, এই সময় পালিত হয় সন্ধিপুজো। মোট ৪৮ মিনিটের এই পুজো অষ্টমীর সময়ের থেকে শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সময়ের থেকে শেষ ২৪ মিনিটের সময় ধরে পাওয়া যায়। এই সন্ধিপুজোর তিথির মধ্যে দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হয়। এই পুজোয় উপস্থিতিতে পূণ্যলাভ হয় বলে জানা যায়।
কোন কাহিনি বর্ণিত রয়েছে?
উল্লেখ্য, আশ্বিনে দেবী দুর্গার অকাল বোধন হয় শ্রীরামচন্দ্র ও রাবণের যুদ্ধের সময়কালে। সত্য যুগে দক্ষিণায়ণের সময় দেবীর পুজো সম্পন্ন করেন রামচন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে যেহেতু দেব দেবীর পুজো সূর্যের উত্তরায়ণ কাল বা দেবদেবীদের দিনের বেলায় সম্পন্ন হয়, সেহেতেু এই ভিন সময়ে শুরু হওয়া বোধনকে অকাল বোধন বলা হয়। এদিকে, রাবণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়, রাবণ বধের জন্য দেবীর বোধন করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। আশ্বিনের কৃষ্ণানবমী তিথিতে সেটি সম্পন্ন হয়। পুজোতে সংকল্প করা হয় যে, যতদিন পর্যন্ত না রাবণ বধ পালা সম্পন্ন হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত কৃষ্ণা তিথিতে দেবীকে পুজো করে তাঁকে তুষ্ট করা হবে । এরপর রামের পুজোয় দেবী তুষ্ট হন। এদিকে, দেবীতে সন্তুষ্ট করতে ১০৮ পদ্মের জোগাড় করার দকে মন দেয় শ্রীরামচন্দ্রের শিবির। স্থির করা হয়, নবমীর অপরাহ্নেই বধ করা হবে রাবণকে। সন্ধিপুজোয় সংকল্প ঘিরে এই কাহিনি বর্ণিত রয়েছে।
শ্রীরামচন্দ্র চোখ অর্পণ করতে যান
পূরাণ মতে বলা হয়, দেবী দুর্গা আবির্ভূত হন, অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে। দেবী চামুণ্ডা রূপে, চণ্ড ও মুণ্ডের বধ করে থাকেন। আর এই সময়ক্ষণেই শাস্ত্র মতে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার জন্য আদর্শ সময় হিসাবে বিবেচনা করেন শ্রীরাম। এই পরিস্থিতিতে দেবীতে তুষ্ট করতে শ্রীরামচন্দ্র ১০৮ পদ্মের জায়গায় ১০৭ টি পদ্ম জোগাড় করে উঠতে পেরেছিলেন। শেষ পদ্মের জায়গায় শ্রীরামচন্দ্র নিজের চোখ উপড়ে অর্পণ করতে যান। সেই সময় দেবী মহামায়া রূপে অবতীর্ণ হয়ে শ্রী রামচন্দ্রকে রক্ষা করেন। শ্রীরামের এই আত্মত্যাগে তুষ্ট হয়ে দেবী রাবণ বধের জন্য শ্রীরামকে আশির্বাদ করেন বলে কথিত রয়েছে। সেই থেকেই এই সন্ধি পুজোয় ১০৮ পদ্মের মাহাত্ম্য বর্ণিত রয়েছে।
১০৮ সংখ্যার গুরুত্ব
হিন্দুশাস্ত্র মতে, ১০৮ পদ্মের গুরুত্ব অপরিসীম। হিন্দুশাস্ত্রে ১০৮ সংখ্যাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে শরীরে আমাদের ১০৮ টি পয়েন্ট রয়েছে। আর তার দ্বারাই শারীরবৃত্তিয় বহু ক্রিয়া এগিয়ে চলে। ফলে সেই জায়গা থেকে এই ১০৮ এর গুরুত্ব রয়েছে। শ্রী যন্ত্রে আবার ১০৮ এর ভাগ ৫৪ কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও পদ্মেবর পবিত্রতার গুণে এই ১০৮ পদ্ম নিয়ে দেবীর সন্ধিপুজোর আয়োজন ঘিরে শাস্ত্রে মাহাত্ম্যের কথা বর্ণিত রয়েছে।