সুপ্রকাশ চক্রবর্তী দেশের সময় : কলকাতার হৃদয়স্থলে, ৩ গভর্নমেন্ট প্লেস (পশ্চিম)-এ অবস্থিত ঐতিহাসিক আয়কর ভবন এক মহিমান্বিত আলোকসজ্জার মাধ্যমে ইতিহাস ও সৌন্দর্যের অপূর্ব মেল বন্ধনে সেজে উঠল। আলোকমালায় সজ্জিত এই ঐতিহাসিক ভবনেই উদ্বোধন হল। যা শুধুমাত্র একটি ভবনের আলোকায়ন নয়, বরং ভারতের অন্যতম প্রাচীন প্রশাসনিক সৌধের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্থাপত্যিক মহিমাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার এক অমর প্রয়াস।
১৮৯০-৯১ সালে ইম্পেরিয়াল সেক্রেটারিয়েট হিসেবে নির্মিত এই ভবন বহুকাল ধরে কলকাতার সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক ঐতিহ্যের এক অমোঘ প্রতীক হিসেবে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। চৌরঙ্গীর আয়কর ভবন প্রতিষ্ঠার পূর্বে এই সৌধই ছিল পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স, বেঙ্গল-সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই ভবনের প্রতিটি ইঁট-পাথর ইতিহাসের নীরব সাক্ষী, যা সময়ের স্রোতে অটল থেকে ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের গৌরব বহন করে চলেছে।

নবপ্রবর্তিত আলোকসজ্জা এই ভবনের ঔপনিবেশিক সৌন্দর্যকে এক নতুন রূপে উদ্ভাসিত করেছে, যা দর্শকের মনে এক অপরূপ চিত্রকল্প সৃষ্টি করে। ভবনের মূল গঠন অক্ষুণ্ণ রেখে এই আলোকায়ন শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করেনি, বরং ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক সুমধুর সেতুবন্ধন রচনা করেছে। এই উদ্যোগ আয়কর বিভাগের ইতিহাস সংরক্ষণের অঙ্গীকার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
এই ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়াসের অংশ হিসেবে, গত ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ডের (CBDT) সম্মাননীয় চেয়ারম্যান ভবনের ছাদে একটি হেরিটেজ আর্কাইভের শুভ উদ্বোধন করেন। এই আর্কাইভ ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আয়কর বিভাগের গৌরবময় অতীতকে সংরক্ষণের এক অনন্য পদক্ষেপ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলোঝলমল এই ভবনের উদ্বোধন করে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম অঞ্চলের প্রধান মুখ্য আয়কর আয়ুক্ত, নীরজ কুমার বলেন, এই আলোকসজ্জা ও হেরিটেজ আর্কাইভ আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুক্ত করবে। এটি কেবল একটি ভবনের সৌন্দর্যায়ন নয়, বরং আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধের প্রকাশ। তিনি আরও আশা ব্যক্ত করেন যে, এই উদ্যোগ বিভাগের সকল সদস্য ও নাগরিকদের মধ্যে গর্ব, আত্মপরিচয় এবং জাতীয় দায়িত্ববোধকে আরও গভীর করবে।
এদিন যখন এই ঐতিহাসিক ভবন কলকাতার বুকে আলোর ঝলকানিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, তখন তা শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং আয়কর বিভাগের অটুট চেতনা, অগ্রগতি ও দেশের প্রতি অবিচল অবদানের এক উজ্জ্বল প্রতীক রূপে প্রতিভাত হচ্ছে। এই আলোকোজ্জ্বল সৌধ কলকাতার আকাশে এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে, যা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অপূর্ব মিলন।
