দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেওয়াল লিখন স্পষ্টই ছিল। অবশেষে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সচিবালয়ের তরফে এখনও সরকারি ভাবে কোনও ঘোষণা এখনও হয়নি। কিন্তু তার আগেই শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ টুইট করে দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কেজরিওয়ালের কথায়, অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভারতে সংক্রমণ কম ছড়িয়েছে। আগেভাগে লকডাউন করার জন্যই এই সুফল পেয়েছে ভারত। এখন লকডাউন তুলে নিয়ে তা জলে যাবে। সেই কারণেই লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অন্তত ১৩ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, কমবেশি সকলেই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সওয়াল করেছেন।
প্রসঙ্গত, সরসারি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা না বললেও কদিন আগে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন যে তিনি বিশেষজ্ঞদের কাছেই শুনেছেন অন্তত ৪৯ দিন লকডাউন মেনে চলা ভাল। তবে একই সঙ্গে তিনি এও বলেন, এটা কোনও সিদ্ধান্ত নয়। তিনি যা শুনেছেন সেটাই শেয়ার করলেন মাত্র।
PM has taken correct decision to extend lockdown. Today, India’s position is better than many developed countries because we started lockdown early. If it is stopped now, all gains would be lost. To consolidate, it is imp to extend it
— Arvind Kejriwal (@ArvindKejriwal) April 11, 2020
এখন দেখার লকডাউনের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়বে না ১৬ দিন। কারণ, পাঞ্জাব ও ওড়িশার মতো রাজ্য ইতিমধ্যে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে। একই দাবি তেলেঙ্গানারাও। জানা গিয়েছে, জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়ে এ ব্যাপারে আজ কালের মধ্যে চূড়ান্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের মতো বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা জানিয়েছিল, ভারতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত লকডাউন চলা উচিত। কিন্তু নিয়ে বহু বিশেষজ্ঞের মতান্তর রয়েছে। কারণ, তাঁরা মনে করছেন এখনও পর্যন্ত দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় কোনও সংক্রমণ ছড়ায়নি। ফলে অত দিন ধরে গোটা দেশ কার্যত স্তব্ধ করে দিলে প্রান্তিক মানুষ শুধু নয় সাধারণ মধ্যবিত্তরাও বিপদে পড়বেন।
বরং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি এখন যে কৌশল নিয়েছেন তা যুক্তিসঙ্গত। লকডাউনের পাশাপাশি কিছু এলাকাকে হটস্পট চিহ্নিত করে সিল করে দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই কৌশলে কাজ দেবে। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রথম দফায় লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৪ এপ্রিল শেষ হলেও, তা শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। আরও দু’সপ্তাহ অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের পর এমনটাই টুই়ট করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। গোটা দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে হবে লকডাউন। স্থান ভেদে বদলাবে নিয়মকানুনও।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সুর কার্যত এই লয়েই বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সব রাজ্যকে বার্তা দিয়েছেন, তাদের জন্য সর্বক্ষণ কাজ করতে তৈরি রয়েছেন তিনি।
গত শনিবারই নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, বাইরে বেরোলে ঘরে তৈরি বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক পরা যাবে। এ দিন ঘরে তৈরি করা মাস্ক পরেই ভিডিয়ো কনফারেন্স শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রীরাও বৈঠকে মাস্ক পরেই উপস্থিত হয়েছিলেন। এ দিনের বৈঠকে আর্থিক প্যাকেজ চেয়েছে অনেক রাজ্যই। একই সঙ্গে ভেন্টিলেটর, পার্সনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট-সহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীরা।