মঙ্গলবার থেকেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি কলকাতা-সহ রাজ্যের ৭ জেলায়:
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃবাংলার বুকে ধেয়ে আসছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস৷ ভয়াবহভাবে আক্রমণ করবে বলে সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়৷ ২০টি জেলা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির দিকে সারাক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মমতা। চার হাজার ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা বিধি মেনেই ত্রাণ শিবির চালানো হবে।
ক্রমেই গতি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সোমবার মৌসম ভবনের দুপুর আড়াইটের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ৬ ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে ইয়াস। এই মুহূর্তে দিঘা থেকে ৬১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে বলেই পূর্বাভাস।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও ওড়িশার পারাদ্বীপের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে বলেই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তার প্রভাবে মঙ্গলবার থেকেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি শুরু হবে উপকূলের জেলাগুলিতে। ইয়াস যত বেশি স্থলভাগের কাছাকাছি আসবে, তত ঝড়বৃষ্টির গতিবেগ বাড়বে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় এই মুহূর্তে ১৬ ডিগ্রি ৫ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রি ৬ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬৩০ কিলোমিটার উত্তরে উত্তর-পশ্চিম, ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে ইয়াস।
মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ইয়াস শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলেই জানিয়েছে মৌসম ভবন। আরও উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগের কাছে পৌঁছনোর কথা ইয়াস-এর। তার পর বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে বলেই পূর্বাভাস।
ইয়াস-এর প্রভাবে সোমবার বিকেল থেকেই রাজ্যের উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় বইবে বলে জানা গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে তত তার গতিবেগ বাড়বে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলি অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমফানের থেকেও বড় হতে চলেছে, এমনই খবর রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যাবেন না। বিভিন্ন ব্লকে রিলিফ সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে’। বিপর্যয় মোকাবিলায় ৫১টি দল তৈরি করা হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘অমিত শাহবাবু আজ বৈঠক করেছেন। ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশকে ৬০০ কোটি করে টাকা দিচ্ছেন। বাংলাকে ৪০০ কোটি করে টাকা দিচ্ছে। বাংলা এত বড় রাজ্য। তাহলে আমরা কেন বঞ্চিত হচ্ছি? গতবার আমফানের টাকাও পেলাম না’। উল্লেখ্য, এদিন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন অমিত শাহ।