পার্থ সারথি নন্দী,দেশের সময়: বিধ্বংসী আমপান কার্যত ধবংস করে দিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সবজী এবং ফলের চাষকে। আম, লিচু, জামরুলের মতো মরসুমি ফলের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে পেয়ারা চাষেও। বনগাঁ, মহকুমা জুড়ে বছরভর পেঁপে,কলা এবং বারুইপুর মহকুমায় পেয়ারার চাষ হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের রুটিরুজি। লকডাউনেও বনগাঁ ও বারুইপুরের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি পেঁপে,কলা,পেয়ারার বাজার চলেছে রমরম করে। ফল আনাজে ছাড় থাকায় কলা,পেঁপে, পেয়ারা সহ পটল, ঝিঙে ,ওলের মতো অন্য সবজী এবং ফলচাষিরা তেমন ক্ষতির মুখ দেখেননি। তবে আমপানের জেরে স ম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে ছবিটা।
সবে বিভিন্ন গাছে গাছে পাক ধরতে শুরু করেছিল হিমসাগর ,ল্যাংড়া। মাটিতে মাচায় ঝিঙে, পটল ভরেছিল ।ভাল ফলন শুরু হয়েছিল লিচুরও।জামরুলে গাছ ভরে উঠেছিল৷ আমপানের এক ধাক্কায় ঝড়ে গিয়েছে সব।পটল, ঝিঙের মাচা সম্পূর্ণ মিশে গিয়েয়েছে মাটিতে৷ কোথাও কোথাও ডালপালা ভেঙে উপড়ে গিয়েছে ফলের গাছও। মাথায় হাত বনগাঁ- বারুইপুর ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার সবজী এবং ফল-চাষির।
পটল, ঝিঙে,পেঁপে,কলা,পেয়ারা বাগানে অধিকাংশ গাছই ঝড়ে পড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। বনগাঁ দক্ষিণ ছয়ঘরিয়ার সবজী চাষি কালি পদ দেবনাথ জানান, “বহু গাছে সবে ফলন এসেছিল পটল ,ঝিঙে সোমবারের হাটে নিয়ে যাওয়া হলেও-শুক্রবারের হাটে আর নিয়ে যাওয়া হলো না ঝড়ের কবলে সব শেষ মাটির ফসল মাটিতেই মিশে গেল চোখের সামনে ।কলা, আম, জামরুল গুলো দিনসাতেকের মধ্যেই তৈরি হয়ে বাজারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই এই দুর্যোগ। বাগানের প্রায় সব গাছই পড়ে গিয়েছে। দু’একটাকে তুলে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। তবে তা থেকে আর ফলন হবে বলে মনে হয় না। এত ঝড় হয়েছে। এ রকম ক্ষতি কোনও দিন হয়নি।”
কালিবাবু জানান, পুরো বাগানের গাছ তুলে আবার নতুন করে গাছ বসিয়ে তা থেকে ফলন পেতে বছরখানেক লেগে যাবে। এই এক বছর কী ভাবে চলবে, নতুন করে চাষের খরচই বা কী ভাবে সামলাবেন, তা ভেবেই দিশাহারা বছর পঁয়ষট্টির এই চাষি।
বনগাঁর পেঁপে,কলা, পটল, ঝিঙে,বারুইপুরের লিচু, জামরুল এই সময় দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়, এমনকী দেশের বাইরেও রফতানি হয়। অনেক চাষি অন্যের গাছ কয়েকমাসের জন্য লিজ নিয়ে ফল ফলিয়ে রোজগার করেন। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। পেঁপে চাষি বিধান দাসের কথায়, “অনেকটা জমি ও গাছ লিজ নিয়েছিলাম। লকডাউনে দাম কিছুটা কম পেলেও সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু ঝড়ে সব পেঁপে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ ক্ষতি কী ভাবে সামলাবো জানি না।” জামরুল চাষি অসীম নাথ বলেন, “খুব ভাল ফলন হয়েছিল এ বার। সব ঝড়ে গিয়েছে। গাছটাও ভেঙে পড়েছে। এই গাছে আর কোনও দিন ফলন হবে না।” চাষিরা জানান, লিচু বা জামরুলের একেকটা গাছে যা ফল ফলে, তা বিক্রি করে চাষের খরচ সামলে দশ-পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। আম বিক্রি করেও এই সময়ে ভাল লাভের মুখে দেখেন চাষিরা। কিন্তু ঝড়ের দাপটে এ বার কার্যত পথে বসার উপক্রম তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে বাজারে সমস্ত সবজী ও মরসুমি ফলের দাম বহুগুণ বাড়তে চলেছে বলেই চাষিদের আশঙ্কা।
বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “ঘরবাড়ির ক্ষতি তো হয়েইছে। পাশাপাশি একশ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, ফলের বাগানগুলো কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কৃষিজীবী মানুষগুলোর রুটিরুজির কী হবে, সেটাই বড় চিন্তার।”উর্দ্ধতন কর্তিপক্ষকে সমস্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। পঞ্চায়েতের তরফে সব সময় চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং তাঁদের পাশে সরকার আছে ,মনবল দৃঢ় রাখার উদ্দ্যেশে পঞ্চায়েত সদস্যরা চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সব সময় খোঁজ খবর নিচ্ছেন৷
যদিও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের তরফে এখনও সবজী ও ফলচাষিদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ। ব্লক দফতরের এক আধিকারিক জানান, ক্ষতির পর্যালোচনা চলছে। সবটা এখনও পরিষ্কার ভাবে তালিকা ভূক্ত হয়নিদ্রুত কাজ চলছে, ক্ষতির চিত্রটা বুঝে সেই মতো ক্ষতিপূরণের বিষয়টা বিবেচনা করা হবে।