দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ মঙ্গলবার ভোর রাতে পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ ই মহম্মদের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তার পর সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা জানিয়েছিলেন, বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে। তার পর থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বিমান হানায় প্রায় তিনশ জইশ জঙ্গিকে খতম করেছে ভারতীয় বায়ু সেনা।
কিন্তু ৪৮ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি প্রশ্ন তুললেন, এতো জঙ্গিকে মারা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, কই কোনও ছবি তো দেখলাম না। দেশের মানুষ তো প্রশ্ন তুলছে। তিনি এও বলেন, কত জন জঙ্গি মারা হয়েছে বিমান হানায়, আদৌ কোনও লোককে মারা হয়েছে কিনা, বোম ঠিক জায়গায় কি পড়েছে তা জানানো উচিত সরকারের।
ওদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে বড় সড় কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছে নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লকের প্রবল কূটনৈতিক দৌত্যের জেরে যারপরনাই চাপে পড়ে যায় ইসলামাবাদ। তার পর এ দিন বিকেলে পাক সংসদে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করেন, ধৃত ভারতীয় পাইলটকে শুক্রবার মুক্তি দেবে ইসলামাবাদ।
ইসলামাবাদের ওই খবর পৌঁছয় কলকাতাতেও। তার পর সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় মমতা বলেন, “আমরা জানতে চাইতেই পারি এয়ার স্ট্রাইকে ক’জন মারা গেছে। কারা মারা গেছে?” তাঁর কথায়, “আমি নিউইয়র্ক টাইমসের একটা খবর পড়েছি, ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্সের খবরও পড়েছি। এরা কেউ বলেছি, বিমান হানায় কেউ মারা যায়নি। কেউ বলছে একজন মারা গেছেন। তা হলে তিনশ, সাড়ে তিনশ সংখ্যাটা কীসের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে?”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাস্তব হল পুলওয়ামার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরোদস্তুর রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোটের আগে। দু’পক্ষই রাজনীতি করছে। বালাকোটে বিমান হানার পর মোদী-অমিত শাহরা যেমন জাতীয়তাবাদের হাওয়া নিজেদের পালে টানতে নেমেছেন। তেমনই বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, এই বিমান হানা যেন হয়েছে তাদের ভোট-ব্যাঙ্কে। তাই মোদী সরকারের কৃতিত্ব লঘু করার চেষ্টায় নেমে পড়েছেন তাঁরা। জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে মানুষ যাতে তাঁদের ভুল না বোঝে সেই কারণে, ভারতীয় বাহিনীর প্রশংসা করছেন। কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন, জওয়ানদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছেন নরেন্দ্র মোদী।
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও সেই রাজনীতির প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। মমতা এ দিন বলেন, “আমরা ফোর্সের সাথে আছি। রাজনীতির জন্য যুদ্ধ চাই না। যদি দেশের জন্য যুদ্ধ হয় তা হলে দেশের সঙ্গে রয়েছি।”
তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্য, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমন কোনও পদক্ষেপ তো মোদী সরকার নেয়নি। হঠাৎ করে তা হলে কেন এ সব হচ্ছে? ওদের রাজনীতিটা ধরে ফেলেছে মানুষ।মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, ‘রাজনীতির জন্য জওয়ানদের মৃত্যু চাই না। কারণ জওয়ানরা আমাদের গর্ব। ভোট জেতার জন্য জওয়ানদের মৃত্যু চাই না। যদি দেশের স্বার্থে যুদ্ধ হয়, তাহলে আমরা দেশের পাশে আছি।’