দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ছুটির দিনে আবারও স্বস্তির খবর শোনাল আবহাওয়া দফতর। রবিবার আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে শহরে। এদিন সকাল থেকেই আংশিক মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। শনিবার সন্ধ্যায় পূবালিবায়ুর কারণে হওয়া বৃষ্টিপাতের জেরে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শহরের তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৫ ডিগ্রি। দুই ক্ষেত্রেই যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম ছিল তাপমাত্রা। বাতাসে জলীয় বাষ্পের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৫ ও ৫১ শতাংশ।
আগামী দু’ তিনদিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও, তারপর থেকেই বাড়তে শুরু করবে গরম। এমনটাই দাবি করছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁদের কথায়, ‘আচমকা পূবালি বায়ু সক্রিয় হয়েছে। একমাত্র দক্ষিণবঙ্গে এই পূবালি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত হয়। ভারতবর্ষের অন্যান্য জায়গায় দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবেই বৃষ্টিপাত হয়।’
কেন সক্রিয় হল পূবালি বায়ু? আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন , ‘ভূমিভাগের ভিতরের দিকে কোথাও যদি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, তাহলে তার জেরেই বঙ্গোপসাগর থেকে এই পূবালি বায়ু প্রবেশ করতে থাকে। এই মুহূর্তে ছোট নাগপুর মালভূমি, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের উপর একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ অবস্থান করছে। আর সেই কারণেই শুক্রবার রাত থেকে পূবালিবায়ু সক্রিয় হয়েছে।’
তবে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে কিছুদিনের মধ্যেই। ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রার অনেকটাই পরিবর্তন দেখা যাবে। তাপমাত্রার পারদ অনেকটাই নিম্নগামী হবে। তবে আগামী ২৩-২৪ এপ্রিল থেকে প্রচণ্ড হারে বাড়তে শুরু করবে তাপমাত্রা। এমনকী ৪০ ডিগ্রিও ছুঁতে পারে তাপমাত্রার পারদ। প্রায় সাত থেকে আটদিন প্রবল গরম থাকবে।’
তবে কী সঠিক সময়ে বর্ষা আসবে না? বিশেষজ্ঞের উত্তর, ‘এটা স্পষ্ট যে এই বছর বর্ষা আসতে বেশ খানিকটা দেরি হবে। সাধারণত ১০ জুন রাজ্যে বর্ষা আসে। কিন্তু এই বছর বর্ষা ২৫-২৬ জুনের আগে আসবে না। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রাক বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার বিচ্ছিন্ন সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে কতটা বৃষ্টিপাত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি বর্ষা আসবে।’
আরও জানানন, ‘এই মুহূর্তে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের উপর এলনিনো রয়েছে। এই এলনিনো হচ্ছে উষ্ণ মহাসাগরীয় স্রোত। এলনিনো থাকলে সচরাচর জলীয় বাষ্পপূর্ন বায়ু ভূমিভাগে প্রবেশ করতে পারে না। তার ফলেই এই বছর কনডেনসেশন এবং বৃষ্টিপাতের এত সমস্যা হচ্ছে। এই এলনিনোকে অতিক্রম করে বর্ষা আসার জন্য যে ধরনের শক্তিশালী নিম্নচাপের প্রয়োজন, তা এখনও সৃষ্টি হয়নি। শনিবার রাজস্থানের উপর একটি ধূলিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিষয়টি থেকে এটা স্পষ্ট যে রাজস্থানের তাপমাত্রা এখনও এমন হয়নি যে বায়ু রাজস্থানের দিকে যাবে। ক্লাইমেটোলজিক্যালি আমরা এটাই মানি যে বায়ু যতক্ষণ না রাজস্থানের দিকে যাচ্ছে, ততক্ষণ কিন্তু বৃষ্টিপাত হবে না।’
এই বছর বিদ্যুতের ঘনঘটা এত বেশি কেন? এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের উত্তর , ‘দিনের বেলায় যখন ভূমিভাগ উত্তপ্ত হয়, তখন জলীয় বাষ্পপূর্ন বায়ু উপরের দিকে ওঠে। তা ঘনীভূত হওয়ার পর আস্তে আস্তে নীচের দিকে নামার চেষ্টা করে। সেই সময় যদি আবার গরম বায়ু উপরের দিকে উঠতে শুরু করে, তাহলে যে বায়ু ঠাণ্ডা হয়ে নামছিল তা আবার উত্তাপ পেয়ে ভেঙে যায়। ফের বাষ্প সৃষ্টি হয়।
এইভাবে বাষ্প ওঠানামা করতে থাকলে, জলকণা ভেঙে গিয়ে অ্যানায়ন এবং ক্যাটায়নে পরিনত হয়। এর ফলে ধনাত্মক আধান ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসে। উপরের দিকে শুধু ঋণাত্মক আধান থেকে যায়। দুই ঋণাত্মক আধানের মধ্যে সংঘাতের ফলে বিদ্যুৎ চমকায়।’
এর জেরে কি এ বছর বজ্রপাত বেশি হবে? ‘বাতাসে জলীয় বাষ্প না থাকলেও বিদ্যুৎ চমকায়। এই বছর এই ঘটনাই বেশি ঘটছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের অভাব। হালকা মেঘ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যখন জলীয় বাষ্প ঢুকবে, তখন বজ্রপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে, সেটা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট’, বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।