আজ ফের প্রতিজ্ঞার মিছিলে মমতা

0
299

দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বিশাল মিছিল করলেন। মিছিলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শামিল হন। তাঁরা মমতার সঙ্গে দীর্ঘপথ হাঁটেন। মিছিল শুরু হয় ময়দান থেকে, শেষ হয় জোড়াসাঁকোতে। মিছিলের মুখ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছোনোর পরও মিছিল শেষ হতে অনেক সময় লাগে।
মিছিলে প্রায় সকলেই গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে এসেছিলেন। লেখা ছিল— ‘‌রেডি টু ডাই, ‌বাট নট অ্যাক্সেপ্ট ক্যাব, এনআরসি’‌। কেউ লিখে নিয়ে এসেছিলেন— ‘‌লক্ষ লক্ষ মানুষকে দিশাহীন, রাষ্ট্রহীন করা যাবে না।’‌ মিছিল শেষে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’‌ প্রত্যাহার করতে হবে। প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’‌ তিনি বলেন, ‘‌মঙ্গল ও বুধবার দু’‌দিনই মিছিলে আমি থাকব। আপনারাও সকলে আসবেন।’‌


আজ মঙ্গলবার ফের মিছিল হবে যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত।
মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই মিছিলেও বহু মানুষ থাকবেন। বুধবার হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় মমতা ময়দানে বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানান। এখানে একটি সংবিধানের প্রতিলিপিও রাখা হয়েছিল। মমতা সকলকে শপথবাক্য পাঠ করান। বলেন, ‘‌আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। বাবাসাহেব আম্বেদকর সংবিধান তৈরি করেছিলেন। আমরা এখানে শান্তিতে থাকব। এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু হতে দেব না।’‌ মিছিলে আসা হাজার হাজার মানুষ শপথ নেন।

এরপর মমতা ময়দানে গান্ধীমূর্তিতে মালা দিয়ে মিছিল শুরু করেন। পথের দু’‌ধারে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। মমতা নমস্কার করেন। মানুষ মমতাকে অভিনন্দন জানান।


এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিলে আসা কর্মীদের মমতা বলেন, ‘‌আপনারা দেড় লক্ষ হাত মাপের কালো কাপড়ের ওপর রক্ত দিয়ে নাম লিখুন। হাজার হাজার, কোটি কোটি চিঠি লিখুন রাষ্ট্রপতির কাছে। রাজ্যপাল বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন। তাঁর কাছে গিয়ে জবাব চান। জবাব চাইবার অধিকার সকলের আছে।’‌ মমতা এদিনও শান্তিরও আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‌কেউ পথ ও রেল অবরোধ করবেন না। এতে সাধারণ মানুষের অসুবিধে হয়। আগুন জ্বালাবেন না। কারা আগুন জ্বালাচ্ছেন, তা আমি জানি। আমার কাছে ভিডিও আছে। আমার কাছে প্রমাণ আছে, বিজেপি–র কাছে মাথা নত করে টাকা নিয়ে কেউ কেউ গোলমাল করছে। আমাদের দলের কেউ এই গোলমালের সঙ্গে যুক্ত নয়। এই হাঙ্গামা কেউ সমর্থন করছে না। দাঙ্গা বাধানোর উদ্দেশ্যেই বিজেপি–র এই তাণ্ডব। আমরা ভাগাভাগির রাজনীতি করি না।

ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না।’‌ কেন্দ্রকে দায়ী করে মমতা বলেন, ‘‌ওরা ইচ্ছে করে ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। শান্তির পথে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‌এই আন্দোলন শুধু হিন্দু, মুসলিমদের নয়, আমাদের বেঁচে থাকার আন্দোলন। সব ধর্মের মানুষ বাংলায় থাকবে। বিজেপি–র হুমকিকে কেউ ভয় পাবেন না। প্ররোচনায় পা দেবেন না। হিংসা কেউ পছন্দ করেন না।’‌
নতুনভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ কেউ দেবেন না বলে জানিয়ে দেন মমতা। কেন্দ্রকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‌তোমরা আইন করার কে?‌ তোমরা গাইড করার কে?‌ ক্ষমতায় এসে আকাশের চেয়ে বিজেপি নিজেদের বড় ভাবছে। বিজেপি চায়, ওরাই থাকবে, অন্য কেউ থাকবে না। এটা হবে না।’‌ মমতা এ ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলার আবেদন জানান। তিনি এদিন স্পষ্ট জানান, আগুন লাগিয়ে কেউ কেউ আমাদের আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে চাইছে। এরপর বলবে, সেনাবাহিনী পাঠাও, সিআইএসএফ পাঠাও, বিএসএফ পাঠাও।

আমাকে একজন নেতা ফোন করে যখন এ সব বলে, তখন আমি তাকে বলি, ‘‌আমাদের পুলিশই যথেষ্ট। আমরা পুলিশের ওপর আস্থা রাখি। ওরা ভাল কাজ করছে।’‌ বিজেপি–কে সাবধান করে মমতা বলেন, ‘‌আগে দিল্লি সামলা, বাংলা আমরা সামলে নেব। বিজেপি–র উদ্দেশ্য, সরকার ফেলে দেওয়া। দাও। তবু মাথা নত করব না। কালা কানুন বাতিল করতে হবে।’‌

মমতা এদিন মঞ্চ থেকে জানান, ‘‌বিজেপি–র হয়ে কয়েকজন ভিডিওতে ভাষণ দিয়ে আমাকে সাবধান করছেন। বিজেপি–র এই দালালদের আমি ক্ষমা করি না। ঘৃণা করি। বিজেপি–র দয়ায় এখানে থাকি না। বাংলাতেও আমাদের নির্বাচিত সরকার আছে। মানুষের দয়ায় আমরা থাকি।

ট্রেনে আগুন লাগিয়ে কয়েকজন বিজেপি নেতা বলে দিলেন, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন হবে। এ সব কথায় কোনও কান দেবেন না। প্রতি ব্লকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। মানুষকে বোঝাতে হবে, বিজেপি মনীষীদের স্মরণ না করে দেশভাগের রাজনীতি শুরু করেছে।

একসঙ্গে বলতে হবে, কেউ বাংলা ছাড়বে না।’‌ এদিনের মিছিলে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে প্রাক্তন খেলোয়াড়রাও পদযাত্রায় হেঁটেছেন। মঞ্চেও ছিলেন। এঁরা হলেন কম্পটন দত্ত, শ্যামল ব্যানার্জি, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, নিমাই গোস্বামী, দিব্যেন্দু বড়ুয়া প্রমুখ। মঞ্চে ছিলেন সাংসদ সৌগত রায়। বক্তব্য পেশ করেন ‌সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জি। ছিলেন স্মিতা বক্সি, সঞ্জয় বক্সি ও সৌম্য বক্সি। মমতার পর চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মালা রায়, শশী পাঁজা মঞ্চে থাকা রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।‌ ‌‌‌মিছিলে হাঁটেন অভিষেক ব্যানার্জি, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জাভেদ খান, দেবাশিষ কুমার, অতীন ঘোষ, পরেশ পাল,শিউলি সাহা, ইন্দ্রনীল সেন, ব্রাত্য বসু, সুজিত বসু প্রমুখ।

Previous articleমুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল সংঘাত এবার চিঠিতে
Next articleপাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান পারভেজ মুশারফকে মৃত্যুদণ্ড দিল পাকিস্তানের বিশেষ আদালত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here