আজ থেকেই নজরবন্দি অনুব্রত, বললেন খেলা হবে

0
774

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উনিশের পর একুশেও!
বৃহস্পতিবার অষ্টম দফার ভোটে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নজরবন্দি করে রাখার সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে ভোটের পর দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত অনুব্রতকে নজরবন্দি রাখা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। উনিশের লোকসভা ভোটেও কেষ্টকে ঘেরাটোপে রাখতে একই পদক্ষেপ করেছিল কমিশন। এবারেও সেই একই পদক্ষেপ করল নির্বাচন সদন। সূত্রের খবর, অনুব্রতর রেকর্ড খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তৃণমূলের অবশ্য অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন গেরুয়া শিবিরের কথায় কাজ করছে। জানা গিয়েছে, কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘এটা কমিশনের রুটিনমাফিক ডিউটি। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হবে। খেলা হবে।’


প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের শেষের দিকে বীরভূমে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রতকে পাশে বসিয়ে দিদি বলেছিলেন, ওরা কেষ্টকে সহ্য করতে পারে না। তাই নজরবন্দি করে। নজরবন্দি করা বেআইনি। এবারও করলে আমি কেষ্টকে বলব আদালতে যেতে। এখন দেখার অনুব্রত কী করেন! বুধবার আদালতে যান কি না!

অনুব্রত ভোটের দিন বিশেষ কোথাও যান না। সকালে মেয়ে সুকন্যাকে নিয়ে ভোট দিয়ে বোলপুর পার্টি অফিসে কন্ট্রোল রুম খুলে ফোনাফুনি করেন। আগের বার সেটাই আটকাতে চেয়েছিল কমিশন। অনুব্রতর তিনটি মোবাইল ফোন সিজ করে নেওয়া হয়েছিল ভোটের আগের রাতে। ভোট মেটার পর তা ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তিনি তো কেষ্ট মণ্ডল! যেই শুনেছিলেন কমিশন ফোন নিয়ে নেবে ওমনি সংবাদমাধ্যমকে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “ওরা তো মোবাইল ফোন নেবে। ল্যান্ড ফোনের তার তো আর কাটতে পারবে না! বীরভূমে দারুণ ভোট হবে। চড়াম-চড়াম, দরাম-দরাম!” প্রসঙ্গত উনিশের লোকসভার আগেই অনুব্রত রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তা নিয়ে সদ্য প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ কবিতাও লিখেছিলেন।

আগামী ২৯ এপ্রিল ভোট রয়েছে বীরভূমে। ফলে ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী বাইরে যেতে পারবেন না ‘কেষ্ট’। পুলিশ-প্রশাসনের নজরেই থাকতে হবে অনুব্রতকে। করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে আগেই কোপ বসেছে নির্বাচনী প্রচারে। শাসকদল থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই শেষ দফার প্রচার বাতিল করেছেন। তবে সম্প্রতি বোলপুরের গীতাঞ্জলী প্রেক্ষাগৃহে একটি ছোট্ট সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব সহ বীরভূম জেলার ১১ টি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থীরা। সভা মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ভারতের নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেন। মমতা বলেন, “বীরভূম খুব শান্ত জায়গা। কিন্তু বীরভূমের উপর কমিশনের রাগ রয়েছে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বীরভূমে অনেক কাজ করেছে। সেই বীরভূমে কেষ্টর উপর ওদের খুবই রাগ। প্রতিবার নির্বাচনের সময় কেষ্ট কে নজরবন্দি করে দিচ্ছে। নজরবন্দি অবৈধ, অপরাধ। এবার করলে কেষ্ট আদালতে যাবে এবং নিরাপত্তা নেবে। নজরবন্দি এভাবে করে রাখা যায় না। আর তোমরা নিজেরা কি করে বেড়াচ্ছ? একজন জুনিয়ার অফিসার সিনিয়র অফিসারদের শো-কজ করছে। কৈফিয়ত চাইছে”। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ভোটটা কিন্তু দেবেন। ভোট না দিলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিলে আগামী দিনে এন আর সি তে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তবে আমি এন আর সি করতে দেব না”।

তবে কেষ্ট মণ্ডলকে শেষ কোন ভোটে এত বিতর্কহীন দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না তাঁর অনুগামীরাও। ‘চড়াম চড়াম’, ‘গুড়-বাতাসা’, ‘পাচনের বাড়ি’র মতো ভোটের আগে কোনও দ্ব্যর্থবোধক শব্দবন্ধ নেই। বাঁধা লবজ শুধু ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’। স্বভাবরসিক কেষ্ট মণ্ডল কি তা হলে এ বার সত্যিই চাপে? এদিন, সিবিআই দফতরে হাজিরা এড়ালেন অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর এক সহযোগীকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। গোরু পাচার মামলায় তাঁদের হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু এদিন হাজিরা এড়িয়ে যান অনুব্রত।

তিনি জানান, কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। এদিকে বাইরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেক্ষেত্রে তদন্তকারীদের থেকে সময় চেয়েছেন কেষ্ট। এদিকে অনুব্রতর সহযোগীর দাবি, তাঁর বাড়িতে বেশ কয়েকজন কোভিড পজিটিভ। ফলে আপাতত নিভৃতাবাসে রয়েছেন তিনি। অনুব্রতর মতোই হাজিরা এড়িয়েছেন তিনিও।

সে যাক! এখন প্রশ্ন হচ্ছে এবার অনুব্রত কী করবেন? তাঁর প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ বীরভূমের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “কেষ্টদা হলেন স্যার অ্যালেক্স ফারগুসনের মতো। সব সময় প্ল্যান বি রেডি থাকে। দেখুন না কী হয়!”

Previous articleবর কোভিড আক্রান্ত , পিপিই পরেই সাত পাক ঘুরলেন দম্পতি, রইল ভিডিও
Next articleকরোনা আক্রান্ত কি মিঠুন চক্রবর্তী? সত্যিটা নিজেই জানালেন ‘মহাগুরু’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here