দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় তৈরি কোভিশিল্ড টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হতে পারে আজ থেকেই। পুণের ভারতী বিদ্যাপিঠ মেডিক্যাল কলেজে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছে দেশের প্রথম সারির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।
এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে দেশের তিন সংস্থা—ভারত বায়োটেক, জাইদাস ক্যাডিলা ও সেরাম ইনস্টিটিউট। এর মধ্যেই ভাল খবর শুনিয়েছে সেরাম। অক্সফোর্ডের ভেক্টর ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় তৈরি তাদের কোভিশিল্ড টিকার তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে দেশে। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট ইতিবাচক হলেই দেশের প্রথম ভ্যাকসিন চলে আসবে বাজারে।
সেরামের টিকা কবে বাজারে আসবে এই নিয়ে নানা গুজব চলছে। কিছুদিন আগেই খবর রটেছিল আর ৭৫ দিনের মধ্যেই দেশে প্রথম করোনার টিকা নিয়ে আসবে সেরাম। তার জবাবে গতকালই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এমন কোনও সম্ভাবনার কথা বলা হয়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের ফল দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ড্রাগ কন্ট্রোল ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর নির্দেশিকা মেনেই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। মানুষের শরীরে টিকার প্রভাব ইতিবাচক হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সেরাম আগে জানিয়েছিল, পুণে, মুম্বই ও আহমেদাবাদ—এই তিন শহরেই চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল শুরু হবে। তবে চূড়ান্ত পর্বে যেহেতু কয়েক হাজার জনকে টিকা দেওয়ার বৃহত্তর কর্মসূচী থাকে তাই দেশের আরও কয়েকটি জায়গাকেও বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেরাম। মোট ১৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টিকার ট্রায়াল শুরু হবে। যার মধ্যে রয়েছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ (এইমস), পুণে বি জে মেডিক্যাল কলেজ, পাটনার রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ, চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, যোধপুর-এইমস, গোরক্ষপুরের নেহরু হাসপাতাল,বিশাখাপত্তনমের অন্ধ্র মেডিক্যাল কলেজ, মাইসোরের জেএসএস অ্যাকাডেমি অব হাইয়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৬০০ জনকে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সেরামের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর প্রকাশ কুমার সিং বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতমানের কোভিড টিকা আনবে সেরাম। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগোতে চলেছি আমরা।’
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে নানা টানাপড়েন চলেছে। সেরাম জানিয়েছে, টিকার ট্রায়ালের ব্যাপারে ড্রাগ কন্ট্রোলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। গাইডলাইনেও কিছু বদল হয়েছে। ড্রাগ কন্ট্রোলের নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, টিকার ট্রায়ালের তত্ত্বাবধান ও যাবতীয় খরচ বহন করবে আইসিএমআর। তার জন্য আইসিএমআরের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছে সেরাম।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হওয়ার পরেই ভারতে এই টিকা তৈরির লাইসেন্স পায় সেরাম ইনস্টিটিউট। ব্রিটেনের জেন্নার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন ChAdOx1 nCoV-19 ক্যানডিডেট ডিজাইন করেছে অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্টের টিম। কোভিড ভ্যাকসিন গবেষণায় অক্সফোর্ডের হাত ধরেছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকা। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিনের ফর্মুলাতেই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরি করেছে সেরাম।