দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা প্রকোপে পুরভোট থমকে গিয়েছে। এর মধ্যেই আগামী ৭ মে, বৃহস্পতিবার মেয়াদ ফুরোচ্ছে কলকাতা কর্পোরেশনের বোর্ডের। এবার কী হবে? এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে চলবে মহানগরের পুর প্রশাসনের কাজ?
মঙ্গলবার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকারি অর্ডার বেরোনোর পরই সবটা স্পষ্ট হবে। তবে তিনি এও বলেন, বোর্ডের মেয়াদ বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কলকাতা পুরবোর্ডে প্রশাসকই নিয়োগ করা হবে।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল পুর ভোট নিয়ে। ওই সময় থেকেই করোনা সতর্কতায় পদক্ষেপ শুরু হয় দেশজুড়ে। সেই সময়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুর ভোট স্থগিত করে দেয়। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
এখন বাংলা তথা সারা দেশের যা পরিস্থিতি তাতে কবে ভোট হবে তা বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আবার এই সময়ে পুর আইন বদলানো যাবে না। তাই প্রশাসক বসানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই বলেই মত অনেকের।
যদিও হাওড়া, চন্দননগরের মতো কর্পোরেশন এবং নৈহাটির মতো বেশ কয়েকটি মিউনিসিপ্যালিটির কাজ পরিচালনা করছেন প্রশাসকরাই। কারণ আগেই সেখানকার বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। হাওড়ার তো গত ছ’মাস ধরে ভোট বকেয়া রয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে কলকাতাও।
যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে’ শুধু কলকাতা নয়। রাজ্যের ১০০টির বেশি পুরসভার মেয়াদ ফুরোবে মে মাসের মধ্যে। সেই সবকটিতেই প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে নবান্নকে।
কে হবেন প্রশাসক? বর্তমান মেয়র অবশ্য বলেছেন, ‘প্রশাসক কে হবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে।’ যদিও রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে পুরসভার বর্তমান মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেই প্রশাসকের আসনে বসাতে চান। রাজ্যের আরও ৮৫টি পুরসভার মেয়াদ শেষ হবে চলতি মাসের বিভিন্ন দিনে। তালিকায় শিলিগুড়ি পুরনিগম, কলকাতার পার্শ্ববর্তী উত্তর ২৪ পরগনার ২৫টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪টি, হুগলির ১২টি পুরসভাও রয়েছে। উল্লেখ্য,
এ দিন অবশ্য ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘ভোট হচ্ছে না। কিন্তু কাজ তো চালাতে হবে। বিশেষত করোনার মতো এই পরিস্থিতিতে। সেই কারণেই প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও কলকাতা পুরসভার আইন অনুযায়ী প্রশাসক বসানো যায় না। তাই অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। রিমুভ্যাল অফ ডিফকাল্টিস অ্যাক্ট-এ এই প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ভোট করা যে সম্ভব না, নির্বাচন কমিশন, সুপ্রিম কোর্টও আগেই জানিয়েছে। তাই ভোট না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসকই কাজ চালাবেন।’
কলকাতা পুরসভায় ২০১৫-র ৮ মে বর্তমান বোর্ড গঠন হয়েছিল। অন্য পুরসভা ও পুরনিগম আইনে নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগের উল্লেখ রয়েছে। ব্যতিক্রম কলকাতা। পুরসভার আইন বিভাগের আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রশাসক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে। তবে এ জন্য রাজ্যপালের সম্মতি লাগবে। এ দিকে করোনা-পরিস্থিতিতে রাজ্য-রাজভবন টানাপোড়েন তুঙ্গে। তাই এই মুহূর্তে অর্ডিন্যান্স নিয়ে রাজ্যপালের কাছে রাজ্য সরকারের যাওয়ার সম্ভাবনা কম। বিকল্প হিসেবে আইনজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই প্রশাসক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে চাইছে রাজ্য। স্বয়ং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘আমরা কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগে অর্ডিন্যান্স আনছি না। দফতর থেকে কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের জন্য একজিকিউটিভ অর্ডার জারি হবে। আইনে এর সংস্থান রয়েছে।’
রাজ্য পরিষদীয় দপ্তরের বাখ্যা, অর্ডিন্যান্সের পথে হাঁটলে ছ’মাসের মধ্যে তা বিধানসভায় পাশ করিয়ে আইনে রূপান্তর করতে হয়। না হলে অর্ডিন্যান্স খারিজ হয়ে যাবে। কোনও কারণে অর্ডিন্যান্স আইনে রূপান্তরিত যদি না-হয় এবং ছ’মাসের মধ্যে ভোটও যদি না-হয়, তা হলে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হবে। করোনা-পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়ে তাতে অক্টোবরের মধ্যে বা চলতি বছরের মধ্যেও কলকাতার পুরভোট করা প্রায় অসম্ভব। আগামী বছর আবার বিধানসভা ভোট। সে ক্ষেত্রে পুরভোট কবে হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
নবান্ন সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার নয়া প্রশাসক হিসেবে এখনই নতুন কোনও মুখ আনতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। করোনা-পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, কেউই এখন তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এই অবস্থায় মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলেও বর্তমান মেয়র প্রতিদিন নিয়ম করে কলকাতা পুরসভা সামলাচ্ছেন। করোনা-পরিস্থিতিতে মানুষকে সচেতন করতে ও তাঁদের সমস্যার কথা শুনতেও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন ফিরহাদ। তাই তাঁকেই প্রশাসক করার সম্ভাবনা প্রবল।