দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার আমপান কবলিত পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার পর বসিরহাট কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য অগ্রিম হিসাবে এক হাজার কোটি টাকার অনুদান দেবে কেন্দ্র।
অগ্রিম কথাটির মধ্যেই রয়েছে আরও অনেক কিছু। এর অর্থ এটাই প্রথম ও শেষ কিস্তি নেই। আপাতত জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হল। একই ভাবে ওড়িশার জন্য ৫০০ কোটি টাকা অগ্রিম অনুদান ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এখন বড় কৌতূহলের বিষয় এটাই, আমপানের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য আরও কত কোটি টাকা বরাদ্দ করতে পারে মোদী সরকার?
এর প্রশ্নের সদুত্তর স্পষ্ট করে এখনই পাওয়া মুশকিল। কারণ, আমপানের কারণে কোন জেলায় কত ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত সমীক্ষা কেন্দ্র বা রাজ্য কেউই এখনও করে উঠতে পারেনি। আপাতত উদ্ধারকাজ চলছে। সমীক্ষা হতে সময় লাগবে। তবে সাম্প্রতিক এবং অতীতে একই ধরনের ঘটনায় কেন্দ্রের ভূমিকা কী ছিল, তা দেখে একটা আন্দাজ হয়তো করা যেতে পারে।
গত বছর মে মাসে ফণী ঘূর্ণিঝড় এসেছিল। ১৮৫ কিলোমিটার বেগে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় ফণী মূলত আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়। পশ্চিমবঙ্গেও তার কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। ৯৯ সালে সুপার সাইক্লোনের পর বিশ বছরে সেই প্রথম এতো বড় দুর্যোগ এসেছিল ওড়িশায়। তাতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ওড়িশার বহু জেলায়।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, ফণী ওড়িশায় আছড়ে পড়ার আগেই ৩৪১ কোটি টাকা আগাম অনুদান পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। ৩ মে ফণী আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়। তার আগে ২৯ এপ্রিলই সেই টাকা পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। কারণ ঝড় আসার আগে রেকর্ড ১২ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে রেখেছিল ওড়িশা সরকার। যে তৎপরতার প্রশংসা করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ সংস্থা ইউনিসেফও। তার পর ঝড় চলে যেতে প্রধানমন্ত্রী ওড়িশায় কবলিত এলাকা ঘুরে দেখে অতিরিক্ত আরও এক হাজার কোটি টাকা অগ্রিম ঘোষণা করেছিলেন (ঠিক যেমন শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক হাজার কোটি টাকা অগ্রিম ঘোষণা করেছেন মোদী)। তা ছাড়া মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও আহতদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী দিল্লি ফিরে যাওয়ার পর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সচিবালয়ের তরফে টুইট করে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রের থেকে মোট সতেরো হাজার কোটি টাকা ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দশ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে নতুন পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য। যে মজবুত পরিকাঠামো ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনও দুর্যোগ এলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সেই সঙ্গে পাঁচ লক্ষ কাঁচা বাড়িকে পাকা করতে আর দুর্যোগ সহ্য করার ক্ষমতা সম্পন্ন টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আরও সাত হাজার কোটি টাকা দিতে হবে কেন্দ্রকে।
কিন্তু সেটা ছিল তৎকালীন দাবি। তখনও প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা হয়নি। এর বিজেডি সরকার যেমন সমীক্ষা চালায়। তেমনই কেন্দ্র তার নিজস্ব টিম পাঠিয়েও পরিস্থিতির সমীক্ষা করে। তার পর রাজ্য সরকার তাদের চূড়ান্ত দাবি পত্রে জানায়, ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য তাদের ৯৩৩৬ কোটি টাকা চাই। সেই সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা ও তার পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য চাই আরও ৫২২৭ কোটি টাকা।
শেষমেশ গত বছর অগস্ট মাসে, অর্থাৎ ফণী তাণ্ডব চালানোর তিন মাস পর আরও ৩৩৩৮.২২ কোটি টাকা অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সেই প্যাকেজের অঙ্ক নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ অগ্রিম ১৩৪১ কোটি টাকা এবং পরে ৩৩৩৮.২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় ওড়িশাকে। মোট ৪৬৭৯.২২ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
ওড়িশায় ফণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় মোট ১৫.৫ লক্ষ (ঝড়ের আগে ও পরে মিলিয়ে) লোককে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে রেখেছিল প্রশাসন (উপফানের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ৬ লক্ষ লোককে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে)। তা ছাড়া ফণীর অভিঘাতের প্রভাবিত ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ। ১.৮৮ লক্ষ হেক্টর চাষযোগ্য জমির ক্ষতি হয়েছিল। ৫,৫৬, ৭৬১ টি বাড়ি পুরো বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৬৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সে বারের ঘূর্ণিঝড়ে। তা ছাড়া ২৬৫০টি বড় পশু, ৩৬৩১ টি ছোট পশু এবং ৫৩ লক্ষ পোলট্রির মুরগি মারা গেছিল।
অনেকের মতে, ওড়িশায় ফণীর ক্ষতিপূরণের জন্য কেন্দ্রের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে হয়তো আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে যে পশ্চিমবঙ্গ কী ধরনের সাহায্য পাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েছেন, রাজ্য খুব শিগগির সমীক্ষার কাজ সেরে ফেলবে। কেন্দ্রের টিম এসে তাদের মতো সমীক্ষা করুক, কোনও অসুবিধা নেই। তার পর দেখা যাক কেন্দ্র শেষমেশ কত টাকা অনুমোদন করে।