পার্থ সারথি নন্দী, দেশের সময়: শীতে ফুলচাষিদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফাল্গুন যেনো তাদের জন্য সৌভাগ্যের কপাট খুলে দেয়। প্রতিবছর বসন্তবরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবেও লাভবান হয়ে ওঠেন তারা। এছাড়াও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে অন্তত লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন উত্তর ২৪পরগনার ঠাকুর নগরের স্থানীয় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, প্রতিবছর বসন্তবরণ, ভালবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ জোগান দিয়ে থাকেন গাইঘাটা,ঠাকুরনগরের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। আর কিছু দিন পরেই বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস। তাই এখন থেকেই বাংলার তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের হাতে ফুল তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইঘাটার ফুলচাষিরা। এসব ফুলই ঠাকুর নগর থেকে কলকাতা সহ জেলাশহরের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান বলেও জানান তারা।
ঠাকুরনগরের পর ফুলের আরেকটি বড় বাজার হাওড়ায় রয়েছে। আসন্ন ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই দিনে এখানকার ফুলচাষিরা কয়েক লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করেছিলেন এবার ৷ কিন্তু সে আশায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অকাল বৃষ্টি। শীতের মরসুমে এই বৃষ্টিতে নষ্ট হতে বসেছে ফুল চাষ৷বিশেষ করে গোলাপ , গাঁদা ফুল চাষে অতিরিক্ত ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ফুল চাষি ও ব্যাবসায়ীরা৷ এর ফলে ফুলের দামও অনেকটাই বেড়েযেতে পারে বলে মনে করছেন তারা৷
স্থানীয়রা জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় গাইঘাটার ঠাকুরনগর এলাকায়। এই গ্রামের এক সফল ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী প্রমথ বিশ্বাস একাই প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ওপর ফুলের চাষ করেছেন। তার চাষ করা ফুলের মধ্যে রয়েছে লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওয়াস ও গোলাপ। এসব ফুলের মধ্যে লিলিয়াম নেদারল্যান্ড, জারবেরা থাইল্যান্ডের জাত। আর গ্লাডিওলাস এক সময় বাইরের ফুল ছিল, তবে এখন দেশেই এই ফুলের চারা পাওয়া যায়। তার কথায় এই বৃষ্টিতে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়বেন তার মত অন্যান্য ফুল চাষিরাও।
মাত্র ১মাস পরেই, ২টি দিবসকে সামনে রেখে স্থানীয় ফুলচাষিরা কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি আরও বলেন সময় মতো সঠিক পরিমাণে ফুল না উঠলে,চাহিদা অনুযায়ী ফুল বিক্রি হবেনা। রীতি মতো চিন্তার ভাজ পড়েছে ফুলচাষিদের কপালে।
বিগত বছরে বেশ লাভের মুখ দেখেছিল এই এলাকার ফুলচাষিরা কিন্ত অকাল বৃষ্টিতে এবছর তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন কত তাড়াতাড়ি ঝলমলে রোদের দেখা মেলে।
ফুলচাষিরা জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ব্যবসা ভাল হয়। এসময় ফুলের দাম ভাল পাওয়া যায়। পাইকারি হারে একটি লিলিয়াম ফুল ১০০ টাকা, জারবেরা ৫-১০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬-৭ টাকা ও গোলাপ ৫-১০টাকা করে বিক্রি করা হয়।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র দাস জানান এই এলাকায় ফুল চাষ করে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে এলাকার উন্নয়ন ঘটছে। বেকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে। ঠাকুরনগরের ফুল জেলার বিভিন্ন স্থানে রফতানি হওয়ায় এলাকার সুনামও বাড়ছে। তবে এই অকাল বৃষ্টি এবার কিছুটা হলেও ফুলচাষিদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে৷