দেশের সময়:কলকাতা: মঙ্গলবার খিদিরপুরে ২৫–এর পল্লী প্রতিমার উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে বলেন, ‘বাংলায় উৎসব দেখার জন্য সকলকে স্বাগত। এই উৎসব সকলে দেখতে আসুন। এখানকার আতিথেয়তার তুলনা হয় না। কিন্তু বিভেদ ছড়াবেন না। গুজবও নয়। বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। এখানকার পুজো কোনও বাধা মানে না। হতাশার কোনও জায়গা নেই। শান্তিতে মানুষ পুজো দেখতে পারেন।’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন নেতাজি ইনডোরে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে দলীয় কর্মীদের কাছে মন্তব্য করেছেন। এদিনই নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি নিয়ে প্রথমে বলেন, ‘আমি কিছু বলব না।’ তারপর বলেন, ‘বাংলায় নো এনআরসি, নো প্যানিক। উৎসব সকলের ভাল কাটুক।’ বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে মমতা সম্প্রীতির বার্তা দেন। যোগ করেন, ‘বাংলায় সবধর্মের মানুষ এই উৎসবে শামিল হন। এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। ধর্ম আপনার, উৎসব সকলের।’
কালীঘাটে সঙ্ঘশ্রীর পুজো প্রথম দিকে দখল করার জন্য বিজেপি চেষ্টা করে। পরে পিছিয়ে আসে। সঙ্ঘশ্রীর প্রতিমা উদ্বোধন করতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, সেই সময় সঙ্ঘশ্রীর পুজোর নামডাক ছিল। প্রতিমার ছবি বিক্রি হত। মাঝখানে সঙ্ঘশ্রীর পুজো ছোট হয়। এবার ওঁরা বড় পুজো করেছেন।’
প্রতিমার ভূয়সী প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিমা শিল্পীকে আমি ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না। আগামী বছর সঙ্ঘশ্রীর পুজো আরও ভাল হবে। আমরা সবাই এই পুজোতে শামিল হব। সুব্রত বক্সিও থাকবেন।’ ৭৫ বছরের পুজো ধুমধাম করে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খিদিরপুরের ২৫–এর পল্লীর প্রতিমা দেখে বিস্মিত মমতা। জল সংরক্ষণ ও প্রকৃতির ভারসাম্যের ওপর থিম করা হয়েছে এই মণ্ডপে। বিশিষ্ট শিল্পী সনাতন দিন্দা উদ্বোধনের সময় থিম বুঝিয়ে দেন মমতাকে। প্লাস্টিকের অসংখ্য বোতল ব্যবহার করেছেন সনাতন। তাঁর এই অসাধারণ সৃষ্টির জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, সুস্মিতা ভট্টাচার্য মণ্ডপ দেখে অবাকই হয়েছেন।
এদিন বৃষ্টিহীন দিন দেখে মমতা খুশি হয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, আবহাওয়া পরিষ্কার হতে দু–একদিন সময় লাগবে। পুজো পুজো ভাব। পুজোর মধ্যেই মনে হয় আর বৃষ্টি নামবে না। মমতাকে দেখার জন্য বিভিন্ন মণ্ডপে উপচে পড়ে ভিড়।
বিকেলের পর অনেক জায়গায় আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ কলকাতার সর্বজনীন ঐকতানে গিয়ে প্রতিমার উদ্বোধন করে এখানে কিছুক্ষণ বসে চা খান। সুব্রত বক্সি এই পাড়ায় থাকেন। দুপুর থেকেই দেখভালে ব্যস্ত ছিলেন সন্দীপ বক্সি। উদ্বোধনের সময় হাজির হন রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজি।
কলকাতার অধিকাংশ বড় পুজোর উদ্বোধন শেষ করে দিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘অরূপ একটু দেরি করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে। বুধবার ওখানে যাব।’ এদিনই ময়দানে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। এদিন ২৫–এর পল্লী ছাড়াও ৭৪, ৬৬–র পল্লী, বকুলবাগান, অবসর, ৭৫ ও ৭৬–এর পল্লী, ফরওয়ার্ড ক্লাব, স্বাধীন সঙ্ঘ, গোলমাঠ ও ফায়ার ব্রিগেডের প্রতিমার আবরণ উন্মোচন করেন মমতা। মহালয়ার আগের দিন থেকে মণ্ডপে যাওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনও নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আপনারা সুস্থ থাকুন। পুজো ভালভাবে কাটান। সকলকে শুভেচ্ছা রইল।’
৭৫ পল্লীতে গিয়ে মমতা সম্প্রীতির থিম দেখে রীতিমতো অবাকই হয়েছেন। শিল্পীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানবিকতাই বড় ধর্ম। মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব যার আছে সেই তো আসল মানুষ। মা প্রত্যেকে ঘরে আছেন। পুজোর সময় তিনি মণ্ডপে মণ্ডপে চলে আসেন। প্রতিটি মণ্ডপে গিয়ে মমতা এদিন স্তোত্র পাঠ করেন। একটানা স্তোত্র পাঠ শুনে এলাকার মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন।