দেশের সময়,ওয়েবডেস্কঃ খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্কুলের ভেতরে শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হলেন তিন সাংবাদিক। তাদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্থা, অশ্রাব্য ভাষায় কটূক্তির পাশাপাশি তাদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার ঘোজা হাইস্কুলের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মী সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এই ঘটনায় ফের পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। এ ব্যাপারে গাইঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন আক্রান্ত সাংবাদিকরা।
ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে ঘোজা হাইস্কুলের পক্ষ থেকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এলাকায় একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। অভিযোগ, দুপুরের কড়া রোদের মধ্যেই ওই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রায় আট কিলোমিটার হাঁটানো হয়। আর তাতেই এক এক করে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রী। অসুস্থ ছাত্রীদের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মানুষকে সচেতন করার নামে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের এমন অমানবিকভাবে রোদের মধ্যে হাঁটানোর ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অসুস্থ ছাত্র ছাত্রী এবং অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল এর আশপাশ এলাকায় পদযাত্রা করার নাম করে এই ভাবে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ তাদেরকে হাঁটতে বাধ্য করা হয়।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ স্কুলে ভাংচুর চালান।
এদিকে এই ঘটনার পর ওই ছাত্র ছাত্রীরা কেমন আছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কি ভাবছে, তা জানতে শনিবার সকালে শুভঙ্কর দাস, অনিরুদ্ধ কীর্তনীয়া এবং উৎসব মন্ডল নামে তিন সাংবাদিক ঘোজা হাইস্কুলে পৌঁছান। সাংবাদিকরা তাদের কর্তব্যের খাতিরে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা এবং তাদের বক্তব্য ক্যামেরা বন্দী করতেই ওই স্কুলেরই কয়েকজন শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মী মারমুখী হয়ে ওই তিন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায় ।
তাঁদেরকে এলোপাতাড়ি কিল,চড়,ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ। এমনকি তাদের মোবাইল এবং ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদেরকে জোর করে স্কুলের অফিস ঘরে ঢুকিয়ে সেখানেও আর এক প্রস্থ মারধর করা হয় । এই ঘটনা চলাকালীন স্কুল চত্বরে উপস্থিত ছিলেন গাইঘাটা থানার একজন সাব-ইন্সপেক্টর সহ অন্যান্য পুলিশকর্মীরা।
তাঁদের চোখের সামনে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে বুদ্ধিজীবী মহলে। উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সাংবাদিকদের উপর নিগ্রহের ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়ে যান। তার পরেও এমন ঘটনায় অবাক হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নাগরিকেরা। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বনগাঁ মহকুমা প্রেস ক্লাব।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ চান সাংবাদিকেরা।