দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ গোটা দেশকে হিন্দি শেখাতে চান বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। হিন্দি দিবসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর থেকে দেশ জুড়ে চলছে বিতর্ক। না, তা নিয়ে একটি বারের জন্যও মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন খুললেন, তবে সরাসরি নয়।
ভারতের নানা ভাষা, নানা সংস্কৃতির কথা উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। তবে সেই বিভিন্নতার বার্তা এক হিন্দিতে নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে নানা ভারতীয় ভাষায় একটিই কথা তিনি বললেন- -ভারতে সব কিছু ভালো আছে। হ্যাঁ, হিন্দি, গুজরাতি, তামিল প্রভৃতির মধ্যে জায়গা পেল বাংলাও।
আমেরিকায় হাউডি মোদী সমাবেশ সত্যই রঙিন হয়ে ওঠে দুই দেশপ্রধানের বক্তব্যে। একে অপরের প্রশংসা চালালেও এ দিন সব থেকে বেশি ধ্বনিত হয় ‘ভারত’ শব্দটি। সেটা যেমন মোদীর মুখে তেমনই ট্রাম্পের মুখেও।
মোদী এ দিন গোটা বক্তব্যে পরোক্ষে নিজের সরকারের গুণগান করলেও, সবটাই ছিল জাতীয়তাবাদের মোড়কে। দেশ ও দশের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে বারবার তুলে ধরেছেন তাঁর প্রথম দফার পাঁচ বছর ও দ্বিতীয় দফার একশো দিনের কাজ। আর সেই সাফল্য গাইতে গিয়েই বলেছেন– ভারতে সব ভালো আছে। তবে সেটাও আবার সরাসরি নয়। ধ্রুপদী গানের আলাপের মতোই ধীরে ধীরে প্রসঙ্গে ঢুকেছেন আর বক্তব্যকে ঝালায় পৌঁছে দিয়েছেন।
মোদীর বক্তৃতার ওই অংশটা ছিল এই রকম– “এই অনুষ্ঠানের নাম হাউডি মোদী। কিন্তু মোদী একা কিচ্ছু না। মোদী অর্থাৎ আমি একশো তিরিশ কোটি মানুষের আদেশে কাজ করা এক সাধারণ ব্যক্তি। তাই আপনারা যখন প্রশ্ন করেন, ‘হাউডি মোদী?’ আমি বলি, ‘ভারতে সব আচ্ছা হ্যায়। সব চাঙ্গাসি। মজা মাছে! অন্তা বাগুম্বি। এল্লা চেন্না গ্রে। এল্লাম সওকিয়াম। সর্বছান চাল্লায়ে। সব খুব ভাল। সবু ভাল্লাছি।’ আমেরিকার বন্ধুরা ভাবছেন, আমি কী বলছি? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমি বললাম– এভরিথিং ইজ ফাইন।”
এর পরেই মোদী ভারতের ভাষা বৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের উদার সংস্কৃতির পরিচয় হল আমাদের ভাষা। বহু বছর ধরে আমাদের দেশে বহু ভাষা, বহু বুলি সুখে সহাবস্থান করছে। আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন পথ, পুজো পদ্ধতি, আঞ্চলিক রীতিনীতি, বেশভূষা, ঋতুচক্র– সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীর মধ্যে আমাদের অনন্য করে রেখেছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারতের সনাতন দর্শন। আমাদের গণতন্ত্রের আধার। এটাই আমাদের শক্তি, আমাদের প্রেরণা। আমরা যেখানেই যাই, বৈচিত্র আর গণতন্ত্রের সংস্কার বহন করে নিয়ে যাই। এই স্টেডিয়ামে পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভারতীয় আমাদের মহান পরম্পরার প্রতিনিধি হয়ে বসে রয়েছেন।”
মোদী কি শুধু শুধুই বললেন এই ভাষা বৈচিত্রের কথা নাকি, সম্প্রতি তৈরি হওয়া ভাষা নিয়ে বিবাদের জবাবও দিয়ে রাখলেন। হয়তো বা অমিতভাইয়ের কথায় তৈরি হওয়া দেশজোড়া বিতর্কের জবাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন নরেন্দ্রভাই। অমিত শাহ ভাষা নিয়ে কী বলতে চেয়েছেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এটা ঠিক, যে বহু মানুষের মাতৃভাষা নিয়ে সেন্টিমেন্টকে আঘাত দিয়েছে ওই মন্তব্য।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, শুধু ভারতে থাকা মানুষেরাই নয়, অনাবাসীদের মধ্যেও তর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে অমিতের ‘হিন্দি’ মন্তব্য। অনেকেই তাই মনে করছেন, বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষা নিয়ে সেন্টিমেন্টকে এগিয়ে দিয়ে ভাষা বিতর্ক সামাল দিলেন মোদী।