দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, ঋণ গ্রাহকদের মোরাটোরিয়ামের মেয়াদের জন্য বকেয়া সুদের উপর আর সুদ দিতে হবে না। ২ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্ম লোনের বা সুনির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণের জন্য তা কার্যকর হবে। সরকার ওই বাড়তি সুদ বাবদ খরচ বহন করবে। ব্যাঙ্কের উপর চাপাবে না।
সুদের উপর কী ভাবে সুদ বকেয়া হয়েছিল?
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই কর্মহানি হতে শুরু করে। ফলে যাঁরা চাকরিজীবী এবং বাড়ি, গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ কেনার জন্য ঋণ নিয়েছেন, প্রশ্ন ওঠে তাঁরা মাইনে ঠিকমতো না পেলে কীভাবে ইএমআই তথা মাসিক সহজ কিস্তির টাকা ব্যাঙ্ককে ফেরত দেবেন? ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তারা ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায়। এই সংস্থাগুলিও তো প্রায় বেশিরভাগই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। তাই ব্যাঙ্ককে কিস্তির টাকা দিতে গিয়ে তারাও বিপদে পড়ে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাওয়াই কী ছিল:
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দিয়েছিল, তারা চাইলে ঋণ গ্রহীতাদের ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মোরাটোরিয়াম দিতে পারে। পরে সেই মেয়াদ ৩১ অগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলা মানে বেদবাক্য। সব ব্যাঙ্কই জানায় তারা গ্রাহকদের মোরাটোরিয়াম দিতে আগ্রহী। তবে এক, গ্রাহক স্থির করবে তারা মোরাটোরিয়ামের সুবিধা নেবে কিনা। দুই এবং সবথেকে বড় বিষয় হল, ৩ মাস বা ৬ মাস ইএমআই না দিলে সুদ বকেয়া হচ্ছে। সেই বকেয়া সুদের উপর কিন্তু চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ জমা দিতে হবে। সেই সুদ আসলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আখেরে ঋণ পরিশোধ করার মেয়াদ আরও এক বছর বা তার বেশি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ গ্রাহকদের আরও বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ধরা যাক, কোন ঋণ গ্রহীতাকে গৃহ ঋণ বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকা ইএমআই বা কিস্তি দিতে হয় ব্যাঙ্ককে। এর মধ্যে আসলের অংশ তিনি ফেরত দেন ১২ হাজার টাকা। ১৮ হাজার টাকা হল আসলের উপর সুদের কিস্তি। অর্থাৎ ৩ মাস ইএমআই না দিলে সুদ বকেয়া হচ্ছে ১৮ X ৩ = ৫৪ হাজার টাকা। ব্যাঙ্কগুলি বলে এর উপরে চক্রবৃদ্ধি হারে কিন্তু সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। একেই বলা হচ্ছে ‘সুদের উপর সুদ’ তথা ইন্টারেস্ট অন ইন্টারেস্ট।
ব্যাঙ্কগুলোর এই ঘোষণা শুনে মাথায় হাত পড়ে গ্রাহকদের। অনেকেই বলতে, শুরু করেন এতো সুবিধার থেকে অসুবিধা হল বেশি। এর চেয়ে বরং ধার দেনা করে বাটি ঘটি বেচে হলেও কিস্তির টাকা দেওয়া ভাল। বহু বেসরকারি ব্যাঙ্কও ইনিয়ে বিনিয়ে গ্রাহকদের সে কথা বোঝাতে থাকে। কারণ, তারা মনে করে কিস্তির টাকা ভালয় ভালয় উদ্ধার হলে মঙ্গল। নইলে ব্যাঙ্কের বড় ক্ষতি হবে।
কিন্তু ব্যাঙ্কগুলির এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। তাতে বলা হয়, তা হলে এই সংকটের পরিস্থিতিতে মানুষ কী সুরাহা পেল? সুপ্রিম কোর্ট তখন সরকারের উপর চাপ দেয়। অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলে। শেষমেশ সরকার ঠিক করেছে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে সুদের উপর সুদ দিতে হবে না গ্রাহকদের।
সরকার এই চাপ নিজের ঘাড়ে কেন নিল?
কারণ, সুদের উপর সুদ পাওয়া ব্যাঙ্কের অধিকার। সেখানে সাধারণ মানুষ আমানত জমা রাখে। সঞ্চয় করে। ব্যাঙ্ক সেই টাকা বাজারে খাটায়। সুদের উপর সুদ না পেলে ব্যাঙ্কগুলির নেট ওয়ার্থ কমে যাবে। ব্যাঙ্কগুলি দুর্বল হবে। ব্যাঙ্ক বিপন্ন হলে বিপুল সংখ্যক মানুষের সঞ্চয়ও বিপদে পড়বে। তাই সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, সুদের উপর যে সুদ বকেয়া হয়েছে সেই টাকা সরকার মেটাবে। ব্যাঙ্কের উপর দায় চাপবে না।
ক্ষুদ্র শিল্প,মধ্যবিত্ত কে বড় ছাড় মোদী সরকারের, বকেয়া ইএমআই-এর উপর সুদের টাকা দিতে হবে না
https://deshersamay.com/ক্ষুদ্র-শিল্পমধ্যবিত্ত/