দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোট বাক্সে দেখা গিয়েছে বামেদের প্রায় সব ভোট রামের দিকে চলে গিয়েছে। তাহলে কি এবার নেতারাও চললেন গেরুয়া শিবিরের দিকে?
রবিবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পদ্ম পতাকা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের টিমে নাম লেখালেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শান্তনু বসু। পেশায় পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক তরুণ নেতা শান্তনু শুধু জেলা সভাপতি ছিলেন না। একই সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য।
এদিন বনগাঁর চাঁদপাড়া এলাকায় একটি সমাবেশ ছিল দিলীপ ঘোষের। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই মঞ্চেই নতুন দলে যোগ দেন শান্তনু। সিপিএমের যুব সংগঠনের এই নেতাকে যোগদান করিয়ে উচ্ছ্বসিত দিলীপ ঘোষও।
সূত্রের খবর সিপিএমের প্রতি শান্তনুর গোঁসার কথা সবাই জানতেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সিপিএমে কিছু সাংগঠনিক রদবদল হয়। সেখানে দু’জন ছাত্র-যুব নেতাকে সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য করে। এক, ডিওয়াইএফআই-এর জেলা সম্পাদক দিলীপ সাহা ও দুই, এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক রাণা রায়। তাঁকে কেন জেলা কমিটিতে নেওয়া হয়নি তা নিয়ে নাকি উষ্মা প্রকাশ করেন শান্তনু। রাজ্য ডিওয়াইএফআইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও বিরক্তির কথা লিখে লেফট করে যান।
কিন্তু বিজেপিতে যোগ দিয়ে দেবেন এটা অনেকেই আন্দাজ করেননি। হাত কামড়াচ্ছেন ডিওয়াইএফআই নেতারা। অনেকেই এখন ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, শান্তনুকে তখন বহিষ্কার করে দিলেই কাজের কাজ হতো। সূত্রের খবর, গত ১৫ দিনে জেলার শীর্ষ নেতারা শান্তনুকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
এর মধ্যেই আবার প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, পরের সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে। সূত্রের খবর, দৌড়ে অনেকের নাম থাকলেও এগিয়ে রয়েছেন এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস। তন্ময় ভট্টাচার্যকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আলোচনা করে ঠিক হবে।” তবে অনেকেই বলছেন, গৌতম দেব ঘনিষ্ঠ দেবজ্যোতি ওরফে শুভই হয়তো সুভাষ চক্রবর্তী, তড়িৎ তোপদারদের জেলায় যুব সংগঠনের সভাপতি হতে চলেছেন।
এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন ,এদেশে যারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তাদের মদত দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার চাঁদপাড়ায় দলের এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, যাঁরা দেশজুড়ে সন্ত্রাসবাদী কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের জন্য মিছিল করছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ওপারে চলে যাওয়া উচিৎ। এদিন গাইঘাটায় বিজেপির অভিনন্দন যাত্রা কর্মসূচি ছিল।
সেখানে দিলীপ ঘোষ সহ দলের নেতা, কর্মীরা
চাঁদপাড়ার দেবীপুর প্রাথমিক স্কুলের মাঠ থেকে বকচরা মাঠ পর্যন্ত মিছিল করেন। তারপর দেবীপুর প্রাথমিক স্কুল মাঠের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন দিলীপ ঘোষ।
এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন, অরুণ সিং, বিধায়ক দুলাল বর, বিশ্বজিৎ দাস, জেলা নেতা দেবদাস মন্ডল সহ অন্যান্যরা। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘রাজ্যে যারা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকার তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। পুলিশ একটা লাঠিও চালায়নি। মিরাটে যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে, পুলিশ তাদের গুলি করে মেরেছে। ওখানে এখন লাশ গোনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘খাগড়াগড়ে কারা সন্ত্রাসবাদী কাজ করেছে, আপনারা জানেন। রানিগঞ্জে কারা সন্ত্রাস করেছে তাও আপনারা জানেন।
যারা দেশে সন্ত্রাসবাদী কাজ করছে দিদিমণি তাদের হয়ে মিছিল করছেন। দিদিমণিকে বলছি, আপনাদের যখন সন্ত্রাসবাদীদের জন্য অত দরদ, তাহলে আপনি ওপারে চলে যান।’ দিলীপ ঘোষ আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদেরকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেবার ব্যবস্থা করেছে। আর সেটার ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। তিনি এদিন জোরের সঙ্গে আশা প্রকাশ করেন যে, ২০২১ সালে বিজেপি এই রাজ্যে ২০০ টির কাছাকাছি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। তৃণমূল ৫০ টি আসনও পাবে না।