দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উচ্চ প্রাথমিক মামলায় স্বচ্ছতা রেখে নতুন করে সাত দিনের মধ্যে মেধা তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফলে ফের বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রবল সমালোচনা করেও শিক্ষক নিয়োগের জট ছাড়িয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। জানিয়ে দিল, আগামী সাত দিনের মধ্যে নম্বর সহ মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। তাহলেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, মেধাতালিকায় যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নাম নম্বর প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুর আড়াইটের সময়ে কোর্টে তলব করা হয় তাঁকে। হাজিরাও দেন তিনি। তাঁকেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, সাত দিনের মধ্যে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে অপদার্থ বলে সমালোচনা করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘স্কুল সার্ভিস কমিশন একটি অপদার্থ সংস্থা। কোন আধিকারিকরা এই কমিশন চালাচ্ছেন? এই কমিশনকে অবিলম্বে খারিজ করে দেওয়া উচিত।’ বিচারপতির প্রশ্ন তোলেন, ‘২০১৯-এর অক্টোবরে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের তরফে দেওয়া হয়েছিল, তা মানা হয়নি কেন? নির্দেশ মেনে ইন্টারভিউ লিস্টও প্রকাশ হয়নি কেন?’
সম্প্রতি উচ্চ প্রাথমিক এবং প্রাথমিকে পুজোর আগে পরে মিলিয়ে একগুচ্ছ নিয়োগের কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে গত ২১ জুন প্রকাশ করা হয় উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ তালিকা।
গত সোমবার উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, উচ্চ প্রাথমিক এবং প্রাথমিকের সমস্ত নিয়োগ হবে শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে কোনও রকম লবি বরদাস্ত করা হবে না।
কিন্তু গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। টুইটে শুভেন্দু লিখেছিলেন, আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন উচ্চ প্রাথমিকের যে ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভাবে মেধার ভিত্তিতে তৈরি। কিন্তু অবাক করার মতো প্রশ্ন হল, মেধার নম্বরটা (মেরিট স্কোর) কোথায়? এরপর এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলাও করা হয়েছিল।
তখনই বোঝা গিয়েছিল ফের মামলা জটিলতায় জড়াতে পারে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। হলও তাই। নম্বর ছাড়া মেধাতালিকা কীভাবে প্রকাশ করা হল? তা কতটাই বা গ্রহণযোগ্য? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু।
সরকারি সূত্রে ইন্টারভিউ পদ্ধতি নিয়েও বেশ কিছু পূর্বাভাস দেওয়া হয়। জানা যায়, তালিকা প্রকাশ করা হলেও উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ এখনই হবে না। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, গণপরিবহণ চালু হলে তবেই অফলাইন পদ্ধতিতে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। তার মধ্যেই ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া আদালতের চৌকাঠে আটকে গেল।
এসএসসির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, কম নম্বর প্রাপ্তরা ইন্টারভিউ তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের জায়গা হয়নি। প্রকাশিত তালিকা বাতিল করে নিয়ম মেনে ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করা হোক, এমন আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন নিয়োগপ্রার্থীরা।
শুক্রবার এই মামলার শুনানির দিন ছিল। সেখানেই ডাকা হয় এসএসসির চেয়ারম্যানকে, নির্দেশ দেওয়া হয় নতুন মেধাতালিকা প্রকাশের।
প্রসঙ্গত, উচ্চপ্রাথমিকের ১৪৩৩৯ পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। আর সেই ইন্টারভিউ তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করেই ফের মামলা হয় হাইকোর্টে। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়ম ভেঙে প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারভিউ তালিকা। ইন্টারভিউয়ের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তা বেনিয়মে ভরা। ন্যূনতম কত নম্বর পেলে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হচ্ছে, তারও কোনও উল্লেখ করা নেই সাইটে। অনেক পরীক্ষার্থীই বেশি নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউতে ডাক পাননি। এরই প্রেক্ষিতে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল আদালত। এরপর আজ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ভর্ৎসনা করে সাত দিনের মধ্যে নম্বর সহ মেধাতালিকা প্রকাশ করতে বলল আদালত।