দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে এবার বাড়িতে বসেই। কোভিড সংক্রমণ হোক বা যে কোনও শারীরিক অসুস্থতা, মাত্র একটা ফোনেই রোগীকে সমস্যামুক্তির উপায় বলবেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কলকাতা-সহ বাংলার সমস্ত জেলায় টেলি মেডিসিন পরিষেবা চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
১ জুলাই থেকে সরকার শুরু করছে ‘টেলি মেডিসিন’।কোভিড এবং অনান্য রোগীরা টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন।
সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেন। তিনি জানানন, ‘টেলি মেডিসিন’ আমাদের ছিলই, এবার থেকে পৃথক সেট আপে চালু হবে। ড. বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন, ১ জুলাই, বেলা বারোটা থেকে এই পরিষেবা চালু হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ, হাসপাতালেও আসা যাচ্ছে না, তখন টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া যাবে।
কলকাতা সহ জেলার সর্বত্রই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। গোড়ার দিকে একসঙ্গে করা হচ্ছে। বারোটা ফোন নম্বর দেওয়া হচ্ছে। পরে জেলায় জেলায় পৃথক ব্যবস্থা হবে। প্রথম দিকে বেশি ফোন হয়ে গেলে অসুবিধে হতে পারে। ধাপে ধাপে ঠিক হয়ে যাবে।
এছাড়া এদিন মুর্শিদাবাদ মডেলে রাজ্যে ‘কোভিড ওয়ারিয়র ক্লাব’ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভাল হয়েছেন, করোনাকে সামনে থেকে দেখেছেন, যাঁদের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন ৬০ জনকে নিয়ে কোভিড ওয়ারিয়র ক্লাব তৈরি করা হল। এঁরা সকলেই বহরমপুরের। তাই বহরমপুরকে ধন্যবাদ। সব জেলাতেই এই রকম ক্লাব চালু হবে।’
ক্লাবে নাম লেখাবার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ‘ক্লাবের সদস্যদের কাজ হবে, বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে কোভিড রোগীদের পাশে দাঁড়ানো। খাবার এগিয়ে দিতে পারবেন, ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাহায্য করতে পারবেন।
ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সাহায্য করতে পারবেন। ভয় না পেয়ে এই সব কাজ তাঁরা করতে পারবেন। এই ৬০ জনের মধ্যে ১০ জন মুর্শিদাবাদ, ১০ জন মালদা, ৪০ জন কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করতে রাজী হয়েছেন। এনাদের সাম্মানিক পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।’ ভয়কে তুচ্ছ করে যাঁরা কাজ করতে এগিয়ে আসছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকে ভয় পাবেন না। করোনা থেকে ভাল হয়ে ওঠা যায়। এঁরাই অভয় দেবেন। আগামী দিনে বিশ্বের কাছে এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। করোনা সোমবার রোগীর পরিসংখ্যান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাক্টিভ ৫ হাজার ৪০০, ভাল হয়ে গেছেন ১২ হাজার।’ তিনি বলেন, ‘যাঁদের শরীরে অন্যান্য সমস্যা রয়েছে, এঁদের যদি করোনার উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে।
তাহলে ভাল হয়ে যাবেন। অতি অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সরকার থেকে আরও ৩ কোটি মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্র দিয়েছে মাত্র ২ কোটি। স্কুলের ১ কোটি ১০ লক্ষ পড়ুয়াদের হাতেও মাস্ক তুলে দেওয়া হবে। ১০০ দিনের কাজ যাঁরা করেন, আশাকর্মীদেরও মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ পরিবারের সদস্যদের হাতে মাস্ক পৌছে যাবে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলেন কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কেন বাড়ছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী এসে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে ভর্তি হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেলে কলকাতায় রেকর্ড করা হচ্ছে। সুতরাং কলকাতার পরিসংখ্যান বেড়ে গেল মনে হচ্ছে। কিছু কিছু জেলায় রোগ বাড়ছে। কারণ বিমান চলছে, দূরপাল্লার ট্রেন চলছে। লোক আসছে।’
যেসব রাজ্যে বেশি করোনা রোগী আছেন, সেসব রাজ্য থেকে স্পেশ্যাল ট্রেন যেন এ রাজ্যে না আসে, মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা এবিষয়ে চিঠি দিয়ে রেলবোর্ডকে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে দূরপাল্লার স্পেশ্যাল ট্রেন, যাঁরা আসছেন তাঁরাই রোগটা বেশি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়টি আমরা সামলে নিয়েছি। কিন্তু বিশেষ ট্রেনে যাঁরা আসছেন, তাঁদের যাতায়াত বন্ধ করতে হবে।
বিমান ৭ দিনের মধ্যে একদিন আসুক। বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মীরা কাজ করছেন না। তাও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
কলকাতায় টেলি মেডিসিন পরিষেবার জন্য থাকবে একটি নির্দিষ্ট নম্বর, সেখানে ফোন করতে পারবেন রোগীরা। আবার প্রতিটি জেলার জন্য থাকবে আলাদা আলাদা নম্বর। সেখানে ফোন করে শারীরিক সমস্যার কথা বললেন, তার উপযোগী পরামর্শ দেবেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। এই পরিষেবার সুবিধা হল, বাড়িতে থেকেই ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন রোগীরা।
কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে সেটা জানাতে পারবেন। খুব জটিল পরিস্থিতি হলে সেক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা করা হবে। টেলি মেডিসিন চালু হলে একদিকে যেমন উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাবে তেমনি রোগী রেফারের সংখ্যাতেও রাশ টানা যাবে। আগামী দিনে এই টেলি মেডিসিন নিয়েই আরও চিন্তভাবনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।