দেশের সময়, বনগাঁ: গোধূলী বেলার রঙের সঙ্গে গেরুয়া রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল শুক্রবার বিকেলের বনগাঁর আকাশ-বাতাস। দীর্ঘ ১৫ দিন পর বনগাঁয় ফিরলেন বনগাঁ পুরসভার ১২ জন বিদ্রোহী কাউন্সিলর। আর তাদের সঙ্গে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন বনগাঁর মানুষ।
ক্ষোভ জমছিল অনেকদিন ধরেই। কিন্তু মূলত ভয়ের কারনে এতোদিন বনগাঁ পুরসভার প্রধান শঙ্কর আঢ্যর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে থাকে। অবশেষে অনাস্থা প্রস্তাব আনার মাধ্যমে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণার কাজ শুরু। আর তার পর থেকে সময় যত এগিয়েছে, পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।
নিজেদের মনের কথা, বাস্তব পরিস্থিতির কথা জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিদ্রোহী তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা। তাদের এই নৈতিক আন্দোলনের সঙ্গী হন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও। বার্তা পৌছায় মমতা ব্যানার্জীর কাছেও। কোনও কিছুতেই যখন দলীয়য় নেতৃত্বের কাছ থেকে সঠিক বিচার পেলেন না দলের এই বিধায়ক, কাউন্সিলররা, তখন তারা বিজেপি দলে নাম লেখাতে বাধ্য হলেন।
গত কয়েকদিন ধরে একপ্রকার অজ্ঞাতবাসে থেকে শুক্রবার বিকেলে বনগাঁর মতিগঞ্জের বিজেপির অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে দম বন্ধ করা পরিবেশ, পরিস্থিতির কথা তুলে ধরলেন দলত্যাগী বিধায়ক, কাউন্সিলরেরা। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাদের কেউ কেউ দলের জেলা নেতৃত্বকে ছাগল এবং বনগাঁর পুরপ্রধানকে দস্যু রত্নাকরের সঙ্গে তুলনা করলেন।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশ্বজিৎ দাস ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে শঙ্কর আঢ্যর নানা অন্যায় কাজের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাম আমলে অনেক অত্যাচার সহ্য করে জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল দলটা করে এসেছি মানুষের পাশে থাকতে। অথচ একজন মানুষের (শঙ্কর আঢ্য) সৈরাচারী শাসনের কারনে বনগাঁর মানুষ দূর্বিসহ যন্ত্রণার মধ্যে কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু সবকিছুইতো শেষ আছে। অনেক চেষ্টা করেও যখন দলের জেলা নেতৃত্ব ব্যক্তিগত স্বার্থে বনগাঁর সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা না ভেবে সৈরাচারী শাসকের পাশে থাকলো, তখন সমস্ত ধৈর্যের বাধ ভেঙে, বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে দলত্যাগের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।
জানি এই সিদ্ধান্ত আমাকে সারা জীবন কুড়ে কুড়ে খাবে। তবুও মানুষকে স্বাধীনতা দিতে, মানুষের কাজে লাগতে পারবো, এটা ভেবেই ভালো লাগছে। বিশ্বজিৎ দাস আরও বলেন, সমস্ত ক্ষমতা থেকে শঙ্কর আঢ্যকে যখন টেনে হিছড়ে মাটিতে নামিয়ে দেওয়া হবে, তখন বনগাঁর মানুষ সম্পূর্ণ শান্তি পাবেন। সেইদিন আসতে এখন সময়ের অপেক্ষা। বিদ্রোহী কাউন্সিলরেরা কিছু পাবার আশায় নয়, সৈরাচারী শাসকের অবসান ঘটাতে আজ দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আপনারা, বনগাঁর সাধারণ মানুষেরা আমাদের পাশে থাকুন। আমাদের আচরণে যদি কেউ দুঃখ পান, তারজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
এদিন বনগাঁর এক নম্বর রেলগেট থেকে যশোর রোড, কোর্ট রোড, স্কুল রোড, চাকদা রোড হয়ে বিজেপির একটি বিশাল মিছিল এসে পৌঁছায় মতিগঞ্জে। মিছিলে বিজেপির অসংখ্য কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন দলত্যাগী বিধায়ক, কাউন্সিলরেরা। ছিলেন সমাজসেবী নারায়ন ঘোষ, বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ ব্যানার্জী, জেলা নেতা দেবদাস মন্ডল সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।