দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একদিকে সাংস্কৃতিক বিবর্তন। অন্যদিকে জনসংযোগে সেই ছয়-সাতের দশকে ফিরে যাওয়া। ব্রিগেডের আগে বামেদের অস্ত্র সময়ের মেলবন্ধন!
হাইকোর্টের সামনের রাস্তা থেকে সাউথ সিটি মল কিংবা নিউ মার্কেট তল্লাট—’২৮ তারিখ ব্রিগেড চলো’ বলে ফ্ল্যাশ মব করেছেন বাম সাংস্কৃতিক কর্মীরা। অর্ক মুখোপাধ্যায়ের গান আর জয়রাজ ভট্টাচার্যের নির্দেশ্নায় একঝাঁক তরুণ তরুণী আধুনিক এই ফর্মকে তুলে ধরেছেন ব্রিগেডের প্রচারে। আর রবিবার ব্রিগেডের আগে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার গ্রাম, মফস্বলে সিপিএম কর্মীরা ব্যস্ত রুটি সংগ্রহে।
ছয়-সাতের দশকে এরকম হতো বলে শোনা যায়। কমিউনিস্ট নেতাদের অধিকাংশ যখন জেলে, জ্যোতিবাবুকে যখন পুলিশ তাড়া করে বেড়াচ্ছে সেই সময়েও কলকাতার সমাবেশে জেলা থেকে আসার আগে বাড়ি বাড়ি থেকে রুটি সংগ্রহ করতেন বাম কর্মীরা। কোন ও বাড়ি থেকে সঙ্গে দিত শুকনো তরকারি কেউ বা একটুকরো পাটালি। পোঁটলা বেঁধে গ্রামগঞ্জ থেকে লালঝাণ্ডা কাঁধে মিছিলে আসতেন মানুষ।
কিন্তু সরকারে আসার পর সেই সিপিএম আসতে আসতে বদলে যেতে থাকে। আটের দশকের শেষ এবং নয়ের দশকের শুরু থেকেই ‘প্রোমোটার’ রাজ কায়েম হয়ে যায় দলের মধ্যে। তা নিয়ে প্রয়াত বিনয় চৌধুরীর সংঘাতও বঙ্গ রাজনীতিতে অবিস্মরণীয়। ‘চোরেদের মন্ত্রিসভা’ বলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাইটার্স ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াও অজানা নয় কারও। যত সময় এগোয়ে, সিপিএম ততই যেন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ২০০০ সালের আশপাশের কথা। লক্ষ্মণ শেঠ তখন পূর্ব মেদিনীপুরের শেষ কথা। কার্যত জেলা প্রশাসন পরিচালনা হয় নিমতৌড়ির সুকুমার সেনগুপ্ত ভবন থেকে। সেই সময়ে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের মেনুতে ছিল বাগদা চিংড়ি, ইলিশ এবং পাঁঠার মাংস। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
কিন্তু কয়েক বছর ধরেই জনসংযগের ক্ষেত্রে পুরনো ফর্মে ফিরতে চাইছে সিপিএম। ২০১৮ সালের গোড়ায় সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন হয়েছিল বরাহ নগরে। সেই সময়ে দেখা গিয়েছিল সম্মেলনে আসা প্রতিনিধিদের জন্য বিকেলের টিফিন এলাকার বাড়িগুলি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তার ফলে দেখা গিয়েছিল, কেউ খাচ্ছেন মুড়ি-চানাচুর আবার তার পাশের জন হয়তো পরোটা-আলুর তরকারি।
ব্রিগেডের আগে সেটাই আরও বড় আঙ্গিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে রুটি সংগ্রহে নেমেছেন সিপিএম কর্মীরা। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, রবিবারের ব্রিগেড ঐতিহাসিক হতে চলেছে। যাঁদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পার্টির যোগাযগ ছিল না, জেলায় জেলায় এমন বহু পুরনো মানুষ রবিবারের ব্রিগেডে আসবেন বলে দাবি বাম নেতাদের। লোক কত হল, ভোটে কী হবে, সে তো পরের কথা। কিন্তু ব্রিগেডের আগে আধুনিক সাংস্কৃতিক ফর্ম আর ঝোরো সময়ের রুটি কালেকশনের ফিউশন ঘটাল সিপিএম।
শনিবার বিকেলে সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছিল, চিকিত্সকরা সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। সব ঠিক থাকলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ব্রিগেডে থাকতে পারেন। কিন্তু না। তা আর হচ্ছে না। মিটিংয়ে আসছেন না বুদ্ধদেববাবু ।
তিনি লিখিত বার্তায় জানিয়েছেন, “ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিভিন্নভাবে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনে বুঝতে পারছি বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসে গেছেন। বড় সমাবেশ হবে। এরকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলেছি। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দী যা কোনওদিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।”
https://www.facebook.com/220653521461677/posts/1667968826730132/
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ায় ব্রিগেড করেছিল বামফ্রন্ট। বক্তা তালিকায় বুদ্ধদেববাবুর নাম ছিল না। মাঠে উপস্থিত লক্ষ বাম জনতা জানতেন বুদ্ধদেববাবু আসবেন না। কিন্তু সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ মিরাকল ঘটে যায়। বুদ্ধদেববাবু তাঁর স্ত্রীকে জানান, “আমি পারব। যাব ব্রিগেড।”
তারপর নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে পাম এভিনিউ থেকে ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা দেয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়। ঠিক দশ মিনিট মাঠে দাঁড়ানো ছিল বুদ্ধদেববাবুর গাড়ি। ভিতরেই বসেছিলেন সস্ত্রীক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু দুবছর আগের ব্রিগেড আর এবারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে দুবার হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে বুদ্ধদেববাবুকে। কয়েকমাস আগে উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়েছিল তাঁর।
এদিন ব্রিগেড পরিদর্শনে গিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “এর আগে কখনও আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে ব্রিগেড করিনি। আইএসএফও লোক আনবে। আরজেডি রয়েছে। ফলে এবারের ব্রিগেড একটা নতুন ব্রিগেড হতে চলেছে।”