দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ প্রবীণ বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে বুধবার বিকেলে অ্যাপোলো হাসপাতালে গেলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণা রায় কোভিডে আক্রান্ত। তিনি এখন ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রয়েছেন। সেই খবর পেয়েই এদিন হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিষেক।
কিছুদিন আগেই মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায় বিজেপি-র সমালোচনা করেছিলেন। এরইমধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মুকুলবাবুও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি আপাতত অনেকটাই সুস্থ হয়ে তাঁর কাঁচড়াপাড়ার বাড়িতে ফিরেছেন। এদিন অভিষেক যখন হাসপাতালে যান, তখন মুকুলবাবু সেখানে ছিলেন না। তবে মুকুল পুত্র তথা প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় সেখানে ছিলেন।
গত ৩ সপ্তাহ ধরেই করোনায় আক্রান্ত মুকুল রায়ের স্ত্রী। ভর্তি রয়েছেন বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যে ৬টা ৪৫ মিনিট নাগাদ মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে পৌঁছন অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে চিকিৎসকদের থেকে মুকুল রায়ের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজও নেন তিনি। এরপর ৭টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান এই তৃণমূল সাংসদ। সেই সময় হাসপাতালে ছিলেন না মুকুল রায় ,জানা গিয়েছে এমনটাই।
গত প্রায় পনেরো দিন ধরে মুকুলবাবুর স্ত্রী অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি। প্রথম থেকেই ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ছিলেন তিনি। গত পরশু সোমবার তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হয়। তৃণমূল সূত্রের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়ের রাজনৈতিক বিরোধ যাই থাকুক পারিবারিক ভাবে একটা সম্পর্ক স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই সুবাদেই অভিষেক হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
তবে বাস্তব হল, রাজনীতি মনস্ক অনেকেই সৌজন্যের কথা বিশ্বাস করতে চান না। তাঁরা এ ধরনের ঘটনার মধ্যে রাজনৈতিক অক্ষের পরিবর্তন দেখার চেষ্টা করেন। শুভ্রাংশু-অভিষেকের সাক্ষাৎ নিয়ে তেমনই ধারণা ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। তাছাড়া কদিন আগেই শুভ্রাংশুর গলায় অসন্তোষ ও অভিমান ঝরে পড়েছিল। অসন্তোষ এই কারণেই যে, বিজেপি নিজেদের ভুল ত্রুটি অনুসন্ধান না করে জনতার বিপুল সমর্থনে নির্বাচিত একটি সরকারকে প্রথম থেকেই বিরক্ত করছে। আর অভিমানের বিষয় হল, এক মাত্র শুভেন্দু অধিকারী আর দিব্যেন্দু অধিকারী ছাড়া তাঁর কোভিডে আক্রান্ত মা ও বাবার শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে বিজেপি পরিবারের কেউ কোনও খোঁজখবর নেননি।
এদিকে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই মুকুল রায়ের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে শোনা যাচ্ছিল একাধিক গুঞ্জন। মুকুল রায়ের নীরবতা জল্পনা বাড়াচ্ছিল। যদিও তিনি জানিয়েছিলেন বিজেপি-তেই রয়েছেন তিনি। কিন্তু এই সৌজন্য সাক্ষাৎকারকে ঘিরে নতুন করে তুঙ্গে জল্পনা।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে কিছুদিন আগেই মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।বিতর্কের সূত্রপাত শুভ্রাংশু রায়ের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে। এই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে আসা সরকারের সমালোচনা করার আগে, আত্মসমালোচনা করা বেশি প্রয়োজন’।
এরপরেই প্রশ্ন উঠছিল, তবে কি তৃণমূলে ফিরে যাবেন এই নেতা? সোশ্যাল মিডিয়াতেও জল্পনা তুঙ্গে। শুভ্রাংশু রায়কে এই প্রশ্ন করা হলে ‘ সংবাদমাধ্যম’-কে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে এখন আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমার মা অসুস্থ।এই নিয়ে এখন কিছু বলতে চাই না।’ শুভ্রাংশুর এই নীরবতা জল্পনা বাড়াচ্ছিল। এবার মুকুল রায়ের স্ত্রীকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখতে যাওয়ার ঘটনায় মুকুল এবং শুভ্রাংশুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আরও বাড়ল জল্পনা।
ফলে এখন অনেকেই দুয়ে-দুয়ে চার করছেন। এবং মনে করছেন, মুকুলবাবু না হোক তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু অচিরে তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন।
এ ব্যাপারে আরও একটি অতীত ঘটনা প্রাসঙ্গিক। সেটা বছর দেড়েক আগের ঘটনা। একদিন রাতে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন শুভ্রাংশু। তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সেই সময় মুকুলবাবু বিজেপিতে ছিলেন। শুভ্রাংশু ছিলেন তৃণমূলে। সেদিন তাঁকে দেখতেও হাসপাতালে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক। মুকুলবাবু সেদিন হাসপাতালে ছিলেন। তবে তাঁর সঙ্গে মমতা বা অভিষেক কারও দেখা হয়নি। কেবল শুভ্রাংশুর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সেদিন দেখা ও কথা হয়েছিল।