অশোক মজুমদার

আমার মা অর্চনা মজুমদার ও জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে আমি দেখি নারীর দুই রূপ। একজনের লড়াই সংসারের রণক্ষেত্রে। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে সংসারের রথটিকে চালু রেখেছিলেন তিনি। আরেকজনের লড়াই বাংলার সমস্যাসঙ্কুল রাজনীতির ময়দানে। নারী দিবসে এই দুজনের কাজের দিকে তাকালে শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে। নারী দিবসের দিনে খুব কাছ থেকে দেখা এই দুই নারীকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।

এই দুজনের মধ্যে খুব মিল। কষ্ট করে সংসার চালানোর সময়ও মা কিছুতেই বলতো না কি করে সংসার চলছে, তার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? যখন রোজগার শুরু করেছি, পরিচিত হচ্ছি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তখনও মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করেও তার নিজস্ব কোন প্রয়োজনের কথা জানতে পারিনি। তার সব জিজ্ঞাসা আমাদের প্রয়োজনকে ঘিরে! বাংলার জননেত্রী, আমাদের প্রিয় দিদিকেও দীর্ঘদিন ধরে আমি খুব কাছ থেকে দেখছি। তারও যেন ব্যাক্তিগত প্রয়োজন বলে কিছুই নেই। ঘরে-বাইরে তিনি একইরকম। মানুষের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেই তার নজর। এর জন্য তার যেকোন সময়, নানা ধরণের বিপদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার অজস্র ঘটনার সাক্ষী আমি নিজেই। দিদির কড়া নিষেধ, তাই এসব নিয়ে কিছু বলতে পারিনা, লিখতে পারিনা আর ছবি তোলা তো নৈব নৈব চ!

ভোট যুদ্ধের মধ্যে নারী দিবসের দিনে এই দুজনকে নিয়ে কত কথা ভিড় করে আসছে মনে। আমার মা রাজনীতি বুঝতেন না। রাজনীতিবিদ বলতে তিনি চিনতেন শুধু ইন্দিরা গান্ধিকে। তাও তিনি রাজনীতি করেন বলে নয়, দেখতে সুন্দর বলে। একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, মা বহুবার আমার কাছে মমতাকে দেখবে বলে জানিয়েছিল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, কেন? মা উত্তর দিয়েছিল, দেখবি একদিন এই মেয়েটা অনেক বড় হবে। বাংলার জননেত্রী তখনও মুখ্যমন্ত্রী হননি। লড়াইয়ের ময়দানে বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন, মার খাচ্ছেন প্রতিপক্ষের গুন্ডাদের হাতে। মমতার প্রতি মায়ের সেই উৎসাহ ও আকর্ষণে আজও ভাঁটা পড়েনি!

ভোটের প্রচারে আগামি দুমাস ব্যস্ত থাকবো বলে কদিন আগেই মার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। নাতিদের খবর জিজ্ঞাসা করার পরই মা হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলেন, মমতার কথা। মা’র সঙ্গে কথা বলে আমার একটা আশ্চর্য উপলব্ধি হল – আমরা নানা ধরণের বিশ্লেষণ করি কিন্তু তারও বাইরে থাকে সাধারণ মানুষের নিজস্ব অনুভব থেকে গড়ে ওঠা একটা ধারণা, যাকে বলে common man’s perception, তারা ভিতরের ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। মা হঠাৎ বললো, দিল্লি থেকে এত মানুষ আসছে, অনেক কিছু হচ্ছে কিন্তু দেখবি মমতাকে কেউ হারাতে পারবে না। আমি অবাক হয়ে গেলাম। মায়ের মমতা এমনই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন পাতা রয়েছে বাংলার এমন লক্ষ লক্ষ মায়ের মমতায়। এই জায়গা থেকে তাকে কেউ সরাতে পারবে না।

আমার নিজেরও তাই বিশ্বাস। টিভি চ্যানেল আর কিছু খবরের কাগজ দেখে মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যেন এসে পড়লো! কিন্তু দেখবেন বাংলার মানুষ শেষ পর্যন্ত দিদির পাশেই থাকবেন। আমি গর্বিত যে এই নারী দিবসের দিনে আমি এমন একজন নেত্রীর পাশে রয়েছি যিনি কখনও হারতে শেখেননি। সব সমীক্ষা, জল্পনা কল্পনা, মিথ্যা প্রমাণ করে এবারের ভোটেও সব পাশার দান তিনি উল্টে দেবেন। ভোটে তিনিই জিতবেন। পশ্চিমবঙ্গের নারীরা ৯০ ভাগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছেন। নিজেদের পরিবারে মা বোনেদের সঙ্গে কথা বললে একথা বুঝতে পারবেন।

হিন্দি বলয়ের মত ভোট এখানে হয়না। সেখানে ঘরের পুরুষরা যে দলকে ভোট দেন, মহিলারাও সেই দলকেই ভোট দেন। কিন্তু বাংলায় তা হয়না। এখানে মহিলা ভোট কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই থাকবে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৮ বছরে একটা প্রবণতা বেশ স্পষ্ট। বাংলায় নারীর সংখ্যা শুধু প্রায় পুরুষদের কাছাকাছি নয়, কোন কোন জায়গায় তা ছাড়িয়েও যাচ্ছে। একমাত্র পশ্চিমবাংলাতেই কন্যাসন্তান জন্মের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজনৈতিক বোদ্ধারা এই নারী ভোট নিয়ে খুব একটা কিছু বলেননা।

নারী দিবসের দিনে আমি আশাবাদী যে বাংলার নারীরা আমাদের প্রিয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকবেন। দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেউই হারাতে পারবেন না। আসুন নারীদিবসে তার পাশে আরও জোরদারভাবে দাঁড়ানোর শপথ নিই আমরা।

এই লেখাটা শেষ করার সময় আবার মায়ের সেই পুরনো কথাটা মনে পড়ে গেল আমার – “দেখিস, এ মেয়ে অনেক দূর যাবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here