দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত সোমবার ফ্রান্স থেকে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমান। বুধবার হরিয়ানার আম্বালার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে এসে পৌঁছনোর কথা সেগুলির। উড়িয়ে আনছেন ভারতীয় পাইলটরা। পথে তাদের সাময়িক বিরতি নেওয়ার কথা ছিল আবু ধাবির আল ধাফরা এয়ারবেসে। তার আগেই দেখা গেল আকাশে জ্বালানি ভরছে রাফাল। সেই ছবি প্রকাশ করা হল ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে।

ভারতীয় বায়ুসেনার টুইটারে প্রকাশ করা হয় এই ছবি। জানা গিয়েছে, একটি ফরাসি এয়ার ফোর্স ট্যাঙ্কার থেকে জ্বালানি ভরে নেয় রাফালগুলি। ৭০০০ কিলোমিটার যাত্রাপথে মাঝ আকাশে বিমানের এই জ্বালানি ভরার ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বায়ুসেনা সূত্রে খবর, দশটি রাফাল তৈরি রেখেছে ফরাসি দাসো অ্যাভিয়েশন। তার মধ্যে প্রথম দফায় পাঁচটি পাঠানো হচ্ছে ভারতে। আগামী বছরের মধ্যে চুক্তিমাফিক ৩৬টি রাফাল পৌঁছে যাবে ভারতে। রাফাল যুদ্ধবিমানের সঙ্গে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তিও যুক্ত করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। যে পাঁচটি রাফাল আসছে ভারতের হাতে সেগুলি থেকে মেটিওর ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে।

রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর জন্য ফ্রান্স থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দেশের ১২ জন পাইলটকে। এয়ারবাস ৩৩০ মাল্টিরোল ট্যাঙ্কার ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট উড়িয়ে কীভাবে মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরতে হবে সেই ট্রেনিং নিয়েছেন পাইলটরা। সেটাই দেখা গিয়েছে ভারতে আসার পথে। রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়ানোর পদ্ধতি ও মাঝ আকাশে জ্বালানির ভরার প্রক্রিয়া জানতে আরও ৩৬ জন বায়ুসেনার পাইলটের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাঁরাও ফ্রান্সে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন।

৩৬টি রাফাল ফাইটার জেটের জন্য ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরেই। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ভারতের জন্য ১০টি রাফাল জেট তৈরি রেখেছে ফরাসি সংস্থা। তার মধ্যে পাঁচটি চলে আসবে এ বছরেই। মে মাসেই প্রথম চারটি রাফাল ভারতের হাতে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এই সময় পিছিয়ে যায়।

ডবল ইঞ্জিন মল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট রাফাল আকাশ থেকে ভূমিতে ও সমুদ্রেও নির্ভুল নিশানা লাগাতে পারে। ৯ টনের বেশি যুদ্ধাস্ত্র বইতে পারে রাফাল। অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের।

রাফালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘মেটিওর’ এবং ‘স্কাল্প’ নামে দুটি মিসাইল যোগ করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। মেটিওর ও স্কাল্প মিসাইল বানিয়ছে ইউরোপিয়ান অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা এমবিডিএ।

মেটিওর হল বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল। প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। প্রতিটি মেটিওর মিসাইলের দাম ২০ কোটি টাকা। ‘স্কাল্প’ হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। দৈর্ঘ্যে ৫.১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৩০০ কিলোগ্রাম। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে এই মিসাইল। আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া যায় এই মিসাইল। এটি ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও ফরাসি বায়ুসেনা। প্রতিটি স্কাল্প মিসাইলের দাম ৪০ কোটি টাকা।

৭০০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আজ, বুধবার দুপুরেই ভারতের মাটি ছোঁবে তারা। নামবে হরিয়ানার আম্বালায়। যোগ দেবে বায়ুসেনায়। পাঁচ ফরাসি রাফাল যুদ্ধবিমানকে সাদরে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আম্বালা বিমানঘাঁটিতে থাকছেন বায়ুসেনা প্রধান আরকেএস ভাদৌরিয়া। 

বুধবার সকাল থেকেই আম্বালায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিমানঘাঁটি সংলগ্ন গ্রাম ধুলকোট, বলদেবনগর, গারনালা ও পঞ্জখোরায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। কোনও রকম ছবি তোলা, ভিডিও করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিমান ঘাঁটির ৩ কিমি রেডিয়াসের মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত ড্রোনও আকাশে ওড়ানো যাবে না বলে বাসিন্দাদের জানিয়ে দিয়েছে আম্বালা জেলা প্রশাসন। 

সোমবার সকালে ফ্রান্স থেকে রওনা দেয় ৫টি রাফাল বিমান। দীর্ঘ ৭,০০০ কিমি পথে আকাশে এয়ার–টু–এয়ার জ্বালানি ভরেছে রাফাল। এছাড়া আরব আমিরশাহিতে ফরাসি বিমানঘাঁটিতে নেমেছে একবার। বায়ুসেনার ‘‌গোল্ডেন অ্যারো ‌স্কোয়াড্রনে যোগ দেবে এই পাঁচটি রাফাল। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here