দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার যখন বিধানসভায় ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশের তোড়জোর চলছে, তখন দুপুরে তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে এক ঝাঁক সেলিব্রিটিকে দলে সামিল করল তৃণমূল। এদিন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিলেন প্রবীণ অভিনেতা দীপঙ্কর দে, ভরত কল, অভিনেত্রী লাভলি মৈত্র এবং কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী উস্তাদ রশিদ খানের কন্যা শাওনা খান।
কয়েকদিন আগে বঙ্গ বিজেপির গানের অ্যালবাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে মুম্বইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে উপস্থিত ছিলেন রশিদ খান। হেমা মালিনীর সঙ্গে তিনি উদ্বোধন করেন সেই অ্যালবাম। যদিও সেই সময়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “আমার বাবার পারলৌকিক কাজের জন্য আমি মুম্বই এসেছিলাম। আমায় একটা অ্যালবাম প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি খুঁজবেন না।”
একুশের মহারণের মুখে তৃণমূলে তারার মেলা। ভোটমুখী বাংলায় ‘ফিল্মি ফ্রাইডে’-তে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন অভিনেতা দীপংকর দে ৷ তৃণমূল ভবনে ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন অভিনেতা ভরত কল , ‘জলনুপূর’ ধারাবাহিক খ্যাত লাভলি মিত্র ও রশিদ খানের মেয়ে শাওনা খানও। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দেন টলি নায়িকা কৌশানি, অভিনেত্রী পিয়া সেনগুপ্ত, অভিনেতা সৌরভ দাস।
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী যেভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন, তাতে এবারের ভোটযুদ্ধে ঘাসফুল শিবিরের কাছে অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জের বলে ব্যাখ্যা পর্যবেক্ষকদের একাংশের। এই প্রেক্ষিতে যেভাবে একের পর এক সেলেব্রেটিদের দলে টানছে তৃণমূল শিবির, তা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগের নির্বাচনগুলিতেও টলি তারকাদের তৃণমূলে যোগদানের ছবি সামনে এসেছিল।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বসু বলেন, ‘তৃণমূলে যোগদানের জন্য অনেকে মুখিয়ে রয়েছেন। অনেক অভিনেতারা তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, এই সময় এই পতাকা হাতে তুলে নেওয়া দরকার। এখনও বাংলায় গণতন্ত্রের পরিবেশ রয়েছে। যাঁরা যোগদান করেছেন, এটা টোকেন মাত্র। সকলে যোগ দিতে চাইছেন’। ব্রাত্য এদিন আরও বলেন, ‘অভিনয় জগৎ থেকে যাঁরা বিজেপি-তে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁরা ভুল করছেন’।
প্রসঙ্গত, উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি-র ‘অভূতপূর্ব উত্থানে’র পর সে দলে যোগ দেন একঝাঁক টলিপাড়ার অভিনেতারা। রিমঝিম মিত্র, কাঞ্চনা মৈত্র সহ টেলিভিশনের একঝাঁক চেনা মুখ বিজেপি-তে যোগ দেন। সম্প্রতি ভোটের আগে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের অভিনেতা কৌশিক রায়।
কয়েকদিন আগে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন অভিনেতা সৌরভ দাস। ঘাসফুল শিবিরে নাম লিখিয়ে সৌরভ বলেন, ‘আমার মাথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত আছে। এতদিন মূল স্রোতে রাজনীতি করিনি। এবার করব।’ এরপরই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তিনি।
তৃণমূল যোগদানের পর কৌশানী বলেছিলেন, ‘আমার বয়স হয়ত অল্প। কিন্তু টালিগঞ্জে আমার অনেক অনুরাগী রয়েছেন, আমার আজকের যোগদান তাঁদের অনুপ্রাণিত করবে। আমি বরাবর একটাই দলকে আদর্শ মনে করেছি, তা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে থাকা তৃণমূল। রাজ্যে কোন দল সরকার গড়বে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। কিন্তু এটাই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সঠিক সময়। দিদির দেখানো পথেই হাঁটতে চাই।’ নিজের প্রথম সিনেমার কথা উল্লেখ করে কৌশানী বলেন, ‘আমার প্রথম সিনেমার নাম ছিল, পারব না আমি ছাড়তে তোকে, সেই সূত্রে আমি তখনই বলে দিয়েছিলাম দিদিকে আমি পারব না ছাড়তে।’
টলিউডে শিল্পীদের মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়ে গিয়েছে। এক দিকে তৃণমূল, অন্য দিকে বিজেপি। তবে তরুণ মজুমদার, অনীক দত্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, বাদশা মৈত্রদের মধ্যে কিছু বামপন্থী অভিনেতা বা পরিচালকও রয়েছেন। তবে এখন মূলত বিভাজনটা তৃণমূল-বিজেপিতেই প্রকট।