দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সকাল থেকেই বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে টেলিফোনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছিলেন দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কারণ, শুভেন্দু উত্তর দিনাজপুর তথা কালিয়াগঞ্জ এবং পশ্চিম মেদিনীপুর তথা খড়্গপুর সদর আসনের পর্যবেক্ষক। তিন আসনেই তৃণমূলের জয় যে অনিবার্য তা আন্দাজ করেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান দিদি।
কালিয়াগঞ্জে তৃণমূলের জয়ের খবর এসেছে। সেই সঙ্গে খড়্গপুর ও করিমপুর দুই আসনেই স্বস্তিজনক ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলার শাসক দল। পরিস্থিতি যখন এমনই তখন ভোট সাফল্য প্রতিক্রিয়া জানাতেও আর দেরি করলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “ঔদ্ধত্য আর অহঙ্কারের ফল বিজেপি। এই জয় মানুষের জয়।”
তিনি বলেন, “লোকসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপির দম্ভ বেড়ে গিয়েছিল। এনআরসি করে দাও, একে নাগরিকত্ব দাও ওকে দেশ থেকে বের করে দাও। যেন জমিদারি ওদের। নাগরিকত্ব দেওয়ার ওরা কে! এমনিতেই তো সবাই এ দেশের নাগরিক”।
করিমপুরে যে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তা শাসক দলের নেতারা আগেই বলছিলেন। কারণ করিমপুর ২ নম্বর ব্লক সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। কিন্তু তৃণমূল স্বপ্নেও ভাবেনি যে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনেও তাঁরা জিততে পারেন। ষোল সালের বিধানসভা ভোটেও কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের কাছে ৪৬ হাজার ভোটে হেরেছিল তৃণমূল। উনিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূল সেখানে পিছিয়ে ছিল ৫৬ হাজারেরও বেশি ভোটে। সেই ব্যবধান কমিয়ে দিয়ে তৃণমূল যে কালিয়াগঞ্জে ২৩০৪ ভোটে জিতেছে তা আদতে বিপুল জয়।
একই ভাবে বরাবরই খড়্গপুর বিধানসভা আসন অধরা ছিল তৃণমূলের কাছে। ষোলোর ভোটে এবং উনিশের লোকসভা ভোটে খড়্গপুরে জিতেছিল বিজেপি। লোকসভায় সেখানে ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানের জিতেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু সেই ব্যবধান মুছে দিয়ে যে ভাবে খড়্গপুরেও এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল তা ঐতিহাসিক বললে কোনও অতিশয়োক্তি হবে না।
মমতা এ দিন বলেন, বিজেপি এর আগে কালিয়াগঞ্জের রাজবংশীদের ভুল বুঝিয়েছিল। কিন্তু এবার আর তাঁরা বিজেপি-র ফাঁদে পা দেননি। তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। খড়্গপুরে আবার অবাঙালিরা আমাদের প্রচুর ভোট দিয়েছেন। সব ধর্ম, জাতি ও ভাষাভাষি মানুষ যে তৃণমূলের পাশে রয়েছেন, আমাদের সমর্থন করছেন তা এই ভোট ফলাফলে পরিষ্কার। এই জয় তাই মানুষের জয়।
সন্দেহ নেই, এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই জয়। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের পর যে সমালোচনা ও তীর্যক মন্তব্য রাজনৈতিক মহল থেকে উড়ে আসছিল, তা কাটিয়ে এ যেন শীতের গোড়াতেই বসন্ত এনে দিয়েছে তৃণমূলে।
কালিয়াগঞ্জে জয়ী হল তৃণমূল। ২৩০৪ ভোটে জয়ী হলেন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তপন দেব সিং। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের প্রমথনাথ রায়। তাঁর মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
রাজ্যের শাসকদলের কাছে কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রটি ছিল চ্যালেঞ্জ। কারণ লোকসভা ভোটের নিরিখে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তাছাড়া লোকসভা ভোটে কংগ্রেস–সিপিএম জোট এখানে প্রায় ৩৬০০০ ভোট পেয়েছিল। তাই নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই প্রচারে ঝাঁপিয়েছিল তৃণমূল। ঘরে ঘরে দিয়ে প্রচার করেছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। তারই ফল মিলল বৃহস্পতিবার।
এই প্রথম কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে জিতল তৃণমূল। ভোটে জয়ের পর প্রার্থী তপন দেব সিং বলেছেন, ‘বিজেপির উপর মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয় হল। দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা প্রচুর পরিশ্রম করেছে। তাই শুরু থেকেই জেতার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম।
তাছাড়া এনআরসি একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।’ এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীও স্বীকার করে নিয়েছেন, এনআরসি–র জন্যই তাঁকে হারতে হয়েছে। কালিয়াগঞ্জে জয়ের পর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেছেন, ‘এটা মানুষের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জয়। বিজেপির উপর মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে।’