বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে সম্মতি, জরুরি ভিত্তিতে ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ পাঠাবে ভারত, প্রায় ১২০০ টন পেঁয়াজ রফতানি হল শনিবার

0
622

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃস রকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন বন্দরে আটকে পড়া পেঁয়াজ রফতানিতে অনুমতি দিল কেন্দ্র। বন্দরে আটকে থেকে পচছিল বস্তা বস্তা পেঁয়াজ। এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। রফাতনির পথে বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশে পেঁয়াজের অগ্নিমূল্যে কেন্দ্র হঠাত্‍‌ করে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল শেখ হাসিনার দেশ। শুক্রবার কেন্দ্রের এই নির্দেশিকার পর, আপাতত স্বস্তি ফিরল বাংলাদেশে। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এন্ড স্টাফ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী দেশের সময়’কে জানান শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থল বন্দর দিয়ে প্রায় ৫০টি ট্রাকে অন্তত ১২০০ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকেছে৷

জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ পাঠিয়ে দেবে ভারত। দু’‌দেশের উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের মধ্যে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কার্তিক বাবু বলেন। সম্প্রতি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি রুখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। আগাম সতর্কবার্তা না পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে দিল্লির ওপর বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷

প্রতিবেশী দেশের বাজারেও বাড়তে শুরু করেছিল পেঁয়াজের দাম। এই পরিস্থিতি দু’‌দেশের হাইকমিশনারদের বৈঠকের পরই বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। রপ্তানি বন্ধ করার আগে যে পরিমাণ পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠানোর কথা ছিল, তা পৌঁছে দেওয়া হবে, জানা গিয়েছে সরকারি সূত্রে। 

কেন্দ্রের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ইতিমধ্যেই একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘‌সমঝোতার খেলাপ’ বলছে ঢাকা। তাদের দাবি, বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হলে পেঁয়াজ আমদানির অন্য ব্যবস্থা করত বাংলাদেশ!‌ সংবাদমাধ্যম–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশি বিদেশমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এম সাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘‌এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হলে বাংলাদেশকে আগে থেকে জানানোর ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে তাঁদের অলিখিত বোঝাপড়া আছে।’‌ 

গত বছরেও দেশের বাজারে দাম বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল মোদি সরকার। সে সময়েও বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কেজি দরে ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল। ভারত সফরে সেই প্রসঙ্গ তোলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছিলেন, এভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। আগে থেকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দিলে ভাল হত, তাহলে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করত বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সরবরাহ কম দেখে লোকে আগেভাগেই বেশি বেশি করে পেঁয়াজ কিনে ঘরে মজুত করতে চাইছে। আর যার জেরে বেশিরভাগ দোকানেই পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকারি বাণিজ্যিক কর্পোরেশনের ট্রাকে করে পেঁয়াজ বেচতে হচ্ছে ৩০ টাকা কিলো দরে। তাও কোনও ক্রেতাকেই ১ কেজির বেশি পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে না। 

গত সোমবার থেকে বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কেন্দ্র। এই অবস্থায় ২৫০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের বিভিন্ন সড়কে আটকে পড়ে। লোডিং থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৯-১০ দিন পেরোনোয় অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজে পচতে শুরু করেছে।এই অবস্থায় আটকে থাকা পেঁয়াজ রফতানি না করলে, আমদানিকারকরা ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এই নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হলে, বিভিন্ন স্থলবন্দরে কত ট্রাক পেঁয়াজ আটকে রয়েছে
সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে অবিলম্বে তা জানাতে বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। তার পরেই এই সিদ্ধান্ত।

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত চড়তে থাকায়, ভারতে উত্‍‌পন্ন সব ধরনের পেঁয়াজের রফতানির উপর গত সোমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কেন্দ্রীয় সরকার। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ‘বেঙ্গালোর রোজ’ পেঁয়াজও রয়েছে। ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড’ অবিলম্বে এই নির্দেশিকা কার্যকর করার কথা বলে। ভারতে উত্‍‌পন্ন বেঙ্গালোর রোজ ও কৃষ্ণপুরম জাতের পেঁয়াজ সব থেকে বেশি রফতানি হয়। নির্দেশিকার আওতায় এই দু-ধরনের পেঁয়াজই রয়েছে।

অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে কর্নাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে এ বছর পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। জল জমে চাষের জমিতেই নষ্ট হয়েছে বিঘের পর বিঘের জমির পেঁয়াজ। যার প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারগুলিতে। নিষেধাজ্ঞা জারির দিন দিল্লির হোল সেল মার্কেটে প্রতি কুইন্টাল ৩০০০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। যেখানে ২৮ অগস্ট প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ছিল ১২০০ টাকা।

পেঁয়াজের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে যাওয়ার পরই সরকার সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাধ্য হয়। প্রতি কিলোগ্রাম পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। নির্দেশিকায়, বাংলাদেশ-সহ সব দেশে ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি অবিলম্বে বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ হল ভারত। প্রতি বছর ভারত থেকে ২০ লক্ষ টন পেঁয়াজ রফতানি হয়। বাংলাদেশ, নেপাল, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কা ব্যাপক ভাবে ভারতের পেঁয়াজের উপর নির্ভর করে। গত বছর সেপ্টেম্বরেও একবার ভারত পেঁয়াজ রফতানি আচমকা বন্ধ করে দিয়েছিল। যার জেরে বাংলাদেশের বাজারে রাতারাতি পেঁয়াজ হয়ে উঠেছিল অগ্নিমূল্য।

হিলি স্থল বন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, বিভিন্নস্থল বন্দরে এখন যে সব পেঁয়াজভর্তি ট্রাক ওয়াগন দাঁড়িয়ে আছে, এগুলো বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া না হলে আচিরেই বেশিরভাগ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হবে, এতে দু-দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

দিল্লির আজাদপুর মান্ডি পট্যাটো অনিয়ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্র শর্মা জানান, দেশের বাজারে অগ্নিমূল্যের কারণে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা– কেন্দ্রের ভালো সিদ্ধান্ত। দক্ষিণ ভারতে পেঁয়াজের উত্‍‌পাদন এ বার মার খাওয়ায়, বাজারে জোগানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। শর্মার মনে করেন, শুধু রফতানি বন্ধ করে বাজারের ঘাটতি পূরণ হবে না। পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানি করার কথাও কেন্দ্রকে ভাবতে হবে। মার্কেট বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ৩০ শতাংশ বেশি পেঁয়াজ রফতানি হয়েছে৷

Previous articleবাংলার পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর,পুলিশ তৃণমূল বাঁচাতে ব্যস্ত, জঙ্গি নেটওয়ার্ক খোঁজার সময় কই: কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী
Next articleদেশের সময় ই পেপার/DESHER SAMAY E PAPER

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here