দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিন কয়েক আগে গেল আমফান: তার উপর মহামারি এবং সর্বোপরি ভারী বর্ষণ, এ সবের জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষিকাজের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে কৃষকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। তাই দেখতে হবে, কৃষক বন্ধু প্রকল্প থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হন। মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘর থেকে এমনই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এ দিন নবান্নের সভাঘরে আয়োজিত পাঁচ জেলার সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। দেখতে হবে, আর ক্ষতি যেন না হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জল জমেছে কৃষিজমিতে। তাতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। এমন অবস্থায় ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে কৃষকদের সাহায্য করতে হবে। চাষের জমি থেকে জমা জল কী ভাবে বার করা যায়, করতে হবে তার ব্যবস্থাও।
অতিমারি পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকের তুলনায় খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমফানের প্রভাবে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁদের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে হবে বলেও এ দিন নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গত ২৩ মার্চ বাংলায় প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। করোনার প্রকোপে আগের চেয়ে প্রচুর খরচ বেড়েছে। সেই তুলনায় কমেছে আয়।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্যে মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে এ দিন আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ফের তিনি জেলায় জেলায় সফরে বেরোবেন বলে জানান। সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্যের বকেয়া প্রকল্পও শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি। তবে টাকা মিলছে না বলে কাজ বন্ধ রাখা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভিন্ রাজ্য থেকে কোনও করোনা রোগী এলেও সেটাকেও রাজ্যের হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে হবে। দেখতে হবে, তিনি যেন সব রকম চিকিৎসা পান। এখনও পর্যন্ত যাঁরা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ পাননি, আগামী সাত দিনের মধ্যে তা মিটিয়ে দিতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ পেয়েছেন কিনা, সে ব্যাপারে রিপোর্ট জমা দিতে হবে অবিলম্বে।’’
করোনা থাকবে, তাই বলে কাজ ফেলে রাখা যাবে না। কয়েক মাস পরেই নির্বাচন। নির্বাচন আসবে যাবে, সরকার থাকবে আপনারা থাকবেন, উন্নয়ন থেমে থাকবে না। তাই দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার প্রশাসনিক বৈঠকে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কেন্দ্র বা নাম না করে রাজ্যপালকে যে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, মঙ্গলবারের বৈঠকে সেই তুলনায় অনেক বেশি প্রশাসনিক কাজে তৎপরতা বাড়াতে দেখা যায় তাঁর। সেইসঙ্গে প্রশাসনিক কর্তা, জেলা সভাপতি বা জেলা পরিষদের সভাধিপতিদেরও শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন তিনি।
এদিনের বৈঠকে ১০০ দিনের কাজকে সামনে রেখে আগামীদিনের পরিকল্পনা সাজালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের বহু চাষের জমিতে জল জমতে শুরু করেছে। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী সেচ দফতর ও পঞ্চায়েত দফতরকে একত্রে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে কাজের নির্দেশ দেন। ন্যূনতম কর্মসূচির মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে বলে প্রশাসনিক বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
১০০ দিনের কাজের টাকাও দ্রুত দিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কাজ করেছিল ১০০ দিনে কাজে, তাদের টাকা যেন বাকি না থাকে। কারণ এই সময় টাকা বাকি রাখা ঠিক নয়।’ তাই ৭ দিনের মধ্যেই টাকা দিয়ে দিতে নির্দেশ দেন তিনি। বাংলা সড়ক যোজনায় দ্রুত কাজ এগোনোরও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট যে রাস্তা রয়েছে তার উপর নজর দিতে হবে। ছোট রাস্তায় বড় গাড়ি কোন রকম ভাবে অ্যালাউ করা যাবে না।’ রাস্তার কাজ নিয়ে তিনি পূর্ব বর্ধমান জেলার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘লজ্জা করে না শুনতে? কাজের অগ্রগতি এত কম কেন?’
রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা সকলের জন্যে মানবিকভাবে কাজ করে চলেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্য রাজ্য থেকে কেউ এলে, তাদেরও চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু তাদের ঠিকানা লিখুন।’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমরা তো বলতে পারিনা যে আমাদের লোক ছাড়া কাজ দেব না। অন্য রাজ্য থেকে চিকিৎসা করতে আসলে তাদের চিকিৎসা করুন। কিন্তু ঠিকানাটা লিখে রাখুন, তাহলে কোভিড আক্রান্তদের রাজ্যে নথিভূক্ত থাকবে তাদের নাম।’
এই দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, জেলা হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে ভিজিট করতে হবে। তিনি বলেন ‘আমার কাছে খবর আছে অনেক জায়গায় লোকেরা কাজে আসছে না। এটা মানা সম্ভব নয়। তিনি স্বাস্থ্য দফতরের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা ভিজিট করুন, গিয়ে দেখুন।’