দেশের সময় বনগাঁ: লকডাউন শিথিল হওয়ায় ব্যাবসায়ীরা বেশ মন খুলেই দোকানদারি করছেন কিছু দিন ধরে,বাজারে এখন বেশ ভিড়,বৃহস্পতিব্যর সকাল ১১টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মতিগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় একটি দোকানের সামনে হঠাৎ কয়েকটি বাইক এসে দাঁড়ায়। ওই বাইকগুলিতে চেপে আসা একদল যুবক লাঠি হাতে নেমে দ্রুত একটি দোকানের সামনে ছুটে গিয়ে এক যুবককে দলবদ্ধ ভাবে ব্যাপক পেটাতে থাকে এই দৃশ্য দেখতেই আশেপাশের সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে যায় এবং রাস্তায় চলতি মানুষও ছুটে পালিয়ে যান অন্যত্র৷ এ সব কথা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন ছয়ঘরিয়া থেকে আসা এক বৃদ্ধ সবজী চাষি, তিনি আরও জানান কেউ বুঝতেই পারছিল না কেন মারামারি হচ্ছে৷ তিনি এবং সকলেই ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান অনেকটাই দূরে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগিয়েছে এর পর বেশ কিছু সময় কেটে যায়,রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে মুখথুবড়ে পড়ে থাকে আহত ওই যুবক।গুরুতর জখম অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে ভ্যানে করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ চিকিৎসকরা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে আহত যুবকের নাম সুতনু দেবনাথ,বাড়ি ছয়ঘরিয়ার ফুলতলা সংলগ্ন এলাকায়। সুতনু (হুলো)র স্ত্রী পূজা দেবনাথ বনগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন,অভিযোগ পত্রে লেখেন ,পরিকল্পিত ভাবে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর অাঢ্যের নেতৃত্বে তাঁর অনুগামীরা তাঁর স্বামীকে বাঁশ, লাঠি,দিয়ে মারে এবং দা দিয়ে কোপায়।এখন তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে৷
পূজা দেবনাথ (সূতনুর স্ত্রী) দেশের সময়কে জানান এদিন সকালে সুতনু বাজার করতে বাড়ি থেকে বের হয়। সেই সময় বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের অনুগামীরা তাঁকে বাঁশ লোহার রড ও কোদালের আছারি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারের আঘাতে সুতনুর ডান হাত ও ডান পা ভেঙে যায়। মাথায় দায়ের একাধিক কোপ মেরে রাস্তায় ফেলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই৷
এই ঘটনার পর বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল ও বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিত দাস, সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি তুলে বনগাঁ থানা ঘেরাও করে। অব শেষে পুলিশের প্রতিশ্রুতি মতো বিক্ষোভকারীরা থানা ছেড়ে চলে যান।
বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন, সুতনু দেবনাথ দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি দলের সক্রিয় সমর্থক, এলাকায় আমপানের মতো দুর্যোগ এবং করোনা সংক্রমণে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছে,তাঁকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল করতে হবে বলে প্রায়ই হুমকি দিত তৃণমূলের নেতারা। তৃণমূল নেতাদের এই কথা অমান্য করার জন্যই আজ সুতনুর মতো একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মীকে মেরে খুন করার চেষ্টা করে বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের অনুগামীরা ।
বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিত দাস বলেন অতনুর অপরাধ সে মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়েন, কোন দল দেখেন না,বিজেপির প্রকৃত যোদ্ধা, তাঁকে আটকাতেই বনগাঁর কুখ্যাত সমাজ বিরোধীদের ১৫-২০ জনের একটি দলকে দিয়ে সুতনুর হাতপা,ভেঙে মাথায় কোপ দিয়ে জীবনে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়,এই জঘন্য কাপুরুষের মতো কাজের নিন্দা করছি, সেই সাথে এর উপযুক্ত সাজা ঘোষণা করছি প্রশাসনের কাছে।পাশা পাশি তিনি আরও বলেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য তাঁর কুখ্যাত গুন্ডা বাহিনীদের কে নিয়ে যে ভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন তার যোগ্য জবাব দেওয়া হবে৷প্রশাসন বিষয়টা দেখছেন প্রয়োজনে বনগাঁর মানুষের জন্য রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করব৷
বনগাঁর সাংসদ (বিজেপি)শান্তনু ঠাকুর বলেন.ভারতীয় জনতা পার্টির অত্যন্ত সক্রিয় কর্মী সুতনু দেবনাথ কে যারা এই রকম নিষ্ঠুর ও নির্মম ভাবে মেরেছে সেই সমস্ত দোষীদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দিতে হবে নয়তো বনগাঁয় আগুন জ্বলবে৷ আগামী ২৪ঘন্টার মধ্যে দোষীদেরকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন বলেও জানান। পাশাপাশি আরও বলেন, তৃনমূল কংগ্রেসের এই নোংরা রাজনীতিকে ধিক্কার জানাই, বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য যে নোংরা রাজনীতি এবং সাধারন মানুষের উপরে অমান বিক অত্যাচার করেছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷
বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন এই ঘটনার সঙ্গে পুরসভার কোন সম্পর্ক নেই,এটি ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বিষয়, ওখানে কে বা কারা কি ঘটিয়েছে তা আমার জানা নেই,পুলিশ প্রশাসন রয়েছে তাঁরা তদন্ত করছে৷ নিন্দুকরা কি বলছে সে কথা শুনে বনগাঁর উন্নয়ন থেমে থাকেনি আগামী দিনেও থেমে থাকবে না৷
বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুদাস দেশের সময় কে বলেন, সুতনু নামে ছেলেটি সিপিএম করত,অনেক অভিযোগ আগে তাঁর নামে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে খাদ্যমন্ত্রী এবং পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যের নামে বিভিন্ন সময়ে অকথ্য গালাগাল এবং খুবই নোংরা কথা বলতো রাস্তা ঘাটে, এদিন ও তেমন কিছু বলছিল বলেই রাস্তার সাধারন মানুষ একটু ধ্বাক্বা দিয়েছে, শঙ্কর আঢ্য ‘র নামে মিথ্যা অভিযোগ যারা করছে, বরং তারাই এদিন বনগাঁ হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে মারধোর করে পোষাক ছিঁড়ে দিয়েছে, অবিলম্বে দোষীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য অনুরোধ করেছি পুলিশ প্রশাসনকে৷
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যাই হোক না কেন এদিন খোলা বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন যুবককে একদল যুবকের লাঠি পেটা যে ভাল ভাবে নেয়নি তা বনগাঁ শহর থেকে গ্রামান্তরে আগুণের ফুলকির মতো ছড়িয়েছে৷ এখন কর্তব্যরত পুলিশ কি ভূমিকা নেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বনগাঁর সাধারন মানুষ। দেখুন ভিডিও: