দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ করোনার টিকা কবে আসবে সে নিয়ে নানা মহলে নানা আলোচনা চলছে। এ বছর ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা কতটা সে নিয়েও সংশয় রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বললেন, করোনা টিকার ট্রায়াল যে গতিতে চলছে, তাতে এ বছর শেষেই টিকা আসার সম্ভাবনা প্রবল। যদি তা না হয়, তাহলে আগামী বছর একেবারের গোড়ার দিকেই ভ্যাকসিন চলে আসবে বিশ্বের বাজারে।

বিশ্বে এখন ৪০ রকম কোভিড ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে, বলেছেন স্বামীনাথন। এর মধ্যে ১০ রকমে ভ্যাকসিন তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালে রয়েছে। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, আমেরিকার মোডার্না, ফাইজার ও বায়োএনটেক, চিনের সিনোফার্মা, সিনোভ্যাক ও ক্যানসিনো বায়োটেকের ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল করছে। ভারতে সেরাম ও ভারত বায়োটেকের টিকাও চূড়ান্ত পর্বের ক্লিনিকাল করছে। 

স্বামীনাথন বলছেন, বিশ্বের প্রথম সারির এই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি যদি তাদের সেফটি ট্রায়ালে পাশ করে যায়, তাহলে বছর শেষের আগেই ভ্যাকসিনে সবুজ সঙ্কেত দেবে রেগুলেটরি কমিটি। সব ঠিক থাকলে এ বছরই টিকা আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

জরুরি ভিত্তিতে সাত তাড়াতাড়ি টিকা নিয়ে আসার ঘোর বিরোধী ছিলেন সৌম্যা স্বামীনাথন। বলেছিলেন, জরুরি ভিত্তিতে টিকা আনার খুব একটা ভাল নাও হতে পারে। মানুষের শরীরে তার প্রভাব কেমন পড়বে সেটা নিশ্চিত না হয়েই টিকা নিয়ে এলে প্রাণের ঝুঁকিও থাকতে পারে। টিকা কতটা নিরাপদ ও কার্যকরী সেটা জানার জন্য ল্যাবরেটরিতে সেফটি ট্রায়ালের পরে তিন স্তরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ করতে হয়।

এই তিন স্তরের প্রথম থেকে শেষ অবধি ধীরে ধীরে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ও টিকার ডোজও বাড়ানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে প্রতিটা ধাপ পেরিয়ে তবেই টিকা নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

হু-র বিজ্ঞানী বলেছেন, প্রথম দুই পর্বে দেখা হয় টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা বা হলেও তা কতদিন স্থায়ী হচ্ছে। এই দুই পর্বের শেষ থেকেই রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ নির্ণয় করার কাজও শুরু হয়। চূড়ান্ত পর্বে কয়েক হাজার জনকে টিকা দিয়ে সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্বে প্রবীণ ও শিশুদেরও টিকা দিয়ে দেখা হয় সার্বিকভাবে এর প্রয়োগের ফল কেমন।

এই পর্বে অনেক সময় জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও টিকার ডোজ দিয়ে তার প্রভাব দেখা হয়। সবদিক দিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলে তবেই টিকার প্রয়োগের জন্য সবুজ সঙ্কেত দেয় ভ্যাকসিন রেগুলেটরি কমিটি। স্বামীনাথন বলছেন, এতগুলো স্তর পার করার আগেই টিকা আনতে চাইছে অনেক দেশই। সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলিও তাতে সায় দিচ্ছে। যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার পরবর্তী ফলাফলের কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।

স্বামীনাথন বলেন, তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের আগে জরুরি ভিত্তিতে টিকা নিয়ে এলে তার দু’রকম প্রভাব দেখা যেতে পারে। প্রথমত, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চিন্তার কারণ। তাছাড়া, টিকা একবার চলে এলে চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়াল মাঝপথেই থেমে যাবে, ফলে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে এর প্রভাব কেমন হচ্ছে সেটা আর পর্যবেক্ষণে রাখা যাবে না।

দ্বিতীয়ত, সঠিকভাবে পরীক্ষা না করেই টিকা দিলে দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হবে না। কারণ কোন বয়সের মানুষের শরীরে টিকার ডোজ কেমন হবে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয় চূড়ান্ত ট্রায়ালের পরেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here