

এ যেন আগুন পাখির মতই ফিরে আসা। সরকারি পদ পেলেন। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান কি সময়ের অপেক্ষা? উৎসবের মরশুমে বঙ্গ রাজনীতির চর্চায় কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান করা হলো শোভনকে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারই উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন শোভন। এর পরেই তাঁর নতুন পদ পাওয়ার ঘোষণাতেই শুরু হয়েছে জল্পনা।

অতীতে তৃণমূল একবার ছেড়ে দেওয়ার পর অনেকেই ফিরে এসেছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায় ফিরলেন একেবারে প্রশাসনিক পদ নিয়ে। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হল, রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (NKDA)-র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।

এত দিন নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গায় নিয়ে আসা হলো শোভনকে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন কলকাতার মেয়রের পদ সামলেছেন শোভন। নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই এ বার নিউ টাউনের দায়িত্ব দেওয়া হলো শোভনকে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলে।
উল্লেখ্য, বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ে বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং সরকারি পরিষেবা প্রদানে উত্তরবঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজের ফাঁকে বৃহস্পতিবার মমতার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন শোভন বলে সূত্রের খবর। কলকাতায় ফিরতেই সরকারি পদ পেলেন শোভন।
এই বিজ্ঞপ্তির অর্থই হল শোভনের আনুষ্ঠানিক ঘরওয়াপসি। এর পর দলের ফের যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল। বরং এই ঘোষণার পর তৃণমূলে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে যে ছাব্বিশের ভোটে কি শোভন প্রার্থী হবেন? কবে থেকে ফের সক্রিয় হবেন রাজনীতিতে!

এদিন শোভন বলেন, “আমার চোখের সামনে নিউ টাউন শহর গড়ে উঠেছে। দিদি আমাকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব সেটি সঠিকভাবে পালন করতে। কীভাবে নিউ টাউন-রাজারহাটকে আরও সুন্দর ও আধুনিক করা যায়, সেদিকে নজর রাখব। দিদিকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই আমার।”
স্মৃতিচারণ করে প্রাক্তন মহানাগরিক আরও বলেন, “আমাকে একসময়ে মেয়রের পদে বসিয়েছিলেন দিদি। সে সময় সব শক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। এবারও একইভাবে কাজ করব।”
তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা এদিন বলেন, ‘শোভনের ঘরওয়াপসি হল’ এই শব্দবন্ধও ঠিক নয়। কারণ, সেই অর্থে তাঁর ঘরওয়াপসি অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে। এই দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত। শোভন বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর থেকে দিদির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। প্রতি বছর ভাইফোঁটায় শোভনকে ফোঁটাও দেন দিদি। অপেক্ষা ছিল, উপযুক্ত সময় ও সঠিক পুনর্বাসনের।

দলের ওই প্রবীণ নেতা আরও বলেন, শোভনের প্রশাসনিক ক্ষমতা অনেকের তুলনায় বেশি ছিল। দিদির সঙ্গে আস্থার সম্পর্কও ছিল বরাবরই মজবুত। সেই কারণে তাঁকে কলকাতার মহানাগরিক করার পাশাপাশি একই সঙ্গে তিনটি দফতরের মন্ত্রী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এহেন শোভনবাবু দল ছাড়ার পর অনেকেরই মাঠের আয়তন বড় হয়েছিল। ফলে তাঁরাও চাইছিলেন না শোভন ফিরে আসুক। উল্টে কেউ কেউ এই ধারণা তৈরি করে দিতে চাইছিলেন যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চান না শোভনের প্রত্যাবর্তন হোক।
এহেন পরিস্থিতিতে দিদি সময় নেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও শোভন-বৈশাখীর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা বৈঠক হয়। তার পর দুদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাহাড়ে শোভন ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেই সাক্ষাতের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই শুক্রবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।

অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে বৈশাখী বলেছিলেন, শোভনের তৃণমূলে ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষা। আপাতত সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। এখন অপেক্ষা ছাব্বিশের।



