দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কড়া কথার জন্য তিনি বিখ্যাত। কখনও কখনও কুকথার জন্যও। বারবার তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ক’দিন আগেই নদিয়ায় একটি জনসভায় তিনি বিরোধীদের আন্দোলনকারীদের গুলি চালানোর কথা বলে হইচই ফেলে দেন রাজ্য রাজনীতিতে। তিনি বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের ‘ননসেন্স’ বলতেও দ্বিধা করেন না। এনিয়ে তাঁর দলের মধ্যেও অনেক সময়ে দ্বিমত তৈরি হয়েছে। তবু তাঁর উপরেই ভরসা রাখল মুরলীধর সেন লেন। তিনি দিলীপ ঘোষই ফের রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হলেন। দ্বিতীয়বার সভাপতি হয়ে দিলীপ বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘কুকথা’ ব্র্যান্ডকে তিনি পাত্তা দিতেই নারাজ।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন পর্ব চলছে। বৃহস্পতিবার ছিল রাজ্য বিজেপির সভাপতি ঘোষণার দিন। সেখানে আর কোনও প্রতিদ্বন্দী না থাকায় সর্বসম্মতিক্রমে দিলীপ ঘোষের নামই ঘোষণা করে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কলকাতায় ন্যাশনাল লাইব্রেরির সভাগারে সভাপতি নির্বাচনের পরে বক্তব্য দিলীপ বলেন, “আমার কথা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। আসলে সেটা আমার কথা নিয়ে নয়, বিজেপির কথা নিয়ে। রাজনৈতিক ভাবে ফুরিয়ে যাওয়া নেতারা মানতেই পারেন না বিজেপি এত কথা বলবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এখন বিজেপির বলার সময়। সবাইকে শুনতেই হবে।”
এরই রেশ ধরে দিলীপ ঘোষ বলেন, রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের উপরে অত্যাচার চলছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ আমার থেকে মিষ্টি কথা আশা করবেন না। তিনি বলেন, “আমি কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আর প্রায় দিনেই কোনও না কোনও কর্মী খুন হচ্ছে। মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমার মুখে মিষ্টি কথা আশা করবেন না।”
এদিন অবশ্য নতুন করে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করেননি দিলীপ। তিনি বিজেপির আদর্শের কথা বারবার বলে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন। মনে করিয়ে দেন তাঁর নেতৃত্বে কী ভাবে কর্মীরা লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন উপহার দিয়েছেন। মনে করিয়ে দেন কী ভাবে ১ কোটি টার্গেট নিয়ে রাজ্যে দলের সদস্য সংখ্যা ৯৮ লাখে পৌঁছেছে।
অন্য দল থেকে যাঁরা বিজেপিতে আসছেন এদিন তাঁদের উদ্দেশেও বার্তা দেন দিলীপ। তিনি বলেন, “পদ নয়, দলে এলে পতাকা দেব।”
মুকুল রায় কি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হচ্ছেন!
সাংগঠনিক নির্বাচনের পর দিলীপ ঘোষ পুনরায় রাজ্য বিজেপির সভাপতি হচ্ছেন। সংগঠনে আর কি রদবদল হতে চলেছে তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও বাকি। তবে বিজেপির শীর্ষ স্তরের একটি সূত্রের দাবি, দলের সর্বভারতীয় সংগঠনের সহ সভাপতি হতে পারেন মুকুল রায়।
দলের ওই সূত্রের মতে, লোকসভা ভোটের কেমিস্ট্রি দল ভাঙতে চায় না। দিলীপবাবুই সভাপতি থাকছেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সৎ, দলের মতাদর্শের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও আনুগত্য প্রশ্নাতীত। কিন্তু একই ভাবে গেরুয়া শিবিরে নবাগত হলেও মুকুল রায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। লোকসভা ভোটের সময়েও বাংলায় ১৮ টি আসন জেতার নেপথ্যে ঘুঁটি সাজানোয় ভীষণভাবে কার্যকরী ছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। বিশেষ করে, বনগাঁ, কোচবিহার, মালদহ উত্তর, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জের মতো আসনে জয়ের পিছনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ফলে সংগঠনে মুকুলবাবুর গুরুত্ব বাড়লে বিধানসভা ভোটের কৌশল নির্ধারণে ও প্রচারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, বাংলায় বিজেপির অন্দরে যে সব ভাল চলছে তা নয়। লোকসভা ভোটের পর থেকেই সমন্বয়ের বড় অভাব রয়েছে। দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়রা দিল্লির পর্যবেক্ষক শিব প্রকাশের সঙ্গে মিলে সমন্বয় করে চলছেন। কিন্তু অনেক সময়েই সেই সব বৈঠকে মুকুলবাবুকে ডাকা হচ্ছে না। এ খবর অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীর গোচরেও পৌঁছেছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন, মুকুলবাবু তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দু’বছর কেটে যাওয়ার পরেও রাজ্য নেতাদের অনেকেই তাঁকে এখনও ফরেন বডি বলে মনে করছেন। কেউ কেউ মতাদর্শের ব্যাপারে গোঁড়া, কারও সমস্যা হল ব্যক্তিগত ইগো, কেউ বা গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
তবে বাস্তব হল, মুকুলবাবুর সাংগঠনিক গুরুত্ব না বাড়ালেও সমস্যা রয়েছে। কেন না তা নাহলে দলের সাংগঠনিক বিস্তারের ক্ষেত্রে তাঁর ওজন থাকছে না। পদের গুরুত্ব থাকলে সাংগঠনিক বিস্তারের ক্ষেত্রে তা সহায়ক হতে পারে বলেই অনেকের মত।
সর্বভারতীয় বিজেপির এক নেতার কথায়, মুকুলবাবুর সাংগঠনিক উত্তরণ সত্যিই হবে কিনা তা সাদা কালোয় এখনই বলা যাবে না। সেটা স্পষ্ট করে অমিত শাহ বা জেপি নাড্ডাই বলতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, উত্তরণের সম্ভাবনা প্রবল। এবং বিজেপির সংগঠনের স্বার্থেই তা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর জরুরি হয়ে পড়েছে রাজ্য নেতৃত্বের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়। সাংগঠনিক রদবদলের পর আশা করা হচ্ছে তা অনেকটা শুধরে যাবে।