দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদের মধ্যেই নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিলে সই করে দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রাষ্ট্রপতি সই করে দেওয়ার পরে জানানো হয়, এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন কার্যকর করে দেওয়া হচ্ছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলিতে যাঁরা ধর্মীয় ভাবে সংখ্যালঘু তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
সংশোধিত এই আইনে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয নিপীড়ের শিকার হয়ে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসিক ও খ্রিস্টানরা ভারতে এসে থাকলে তাঁরা এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন।
সংসদে এই বিলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা সরব হলেও তাঁদের সব আশঙ্কার জবাব দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসকে। বিল পেশ করার সময় তিনি বলেন, প্রতিবেশী পাকিস্তান ও অধুনা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমেছে কুড়ি শতাংশ হারে। হয় তাঁরা মারা পড়েছেন নতুবা ভারতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি আশ্বাস দেন, এ দেশের মুসলমানদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, তাঁরা এ দেশের নাগরিক ছিলেন এবং এ দেশের নাগরিক থাকবেন।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা তখন বলেন, “এত তাড়া কিসের? এই বিলটিকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো উচিত। বিলটি এমন ভাবে পাশ করানো হচ্ছে যেন মনে হচ্ছে দেশ বিশাল কোনও সমস্যায় পড়েছে। আমরা এই বিলের বিরোধিতা করছি। এই বিরোধিতার কারণ রাজনৈতিক নয়, এই বিরোধিতার কারণ নৈতিক ও সাংবিধানিক। এই বিল ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের উপরে আঘাত। এই বিল ভারতের আত্মার উপরে আঘাত, এই বিল নৈতিকতার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে।”
বিজেপির জগৎপ্রকাশ নাড্ডা অবশ্য এর বিরোধিতা করে বলেন, “২০০৩ সালে যখন আডবাণীজি (লালকৃষ্ণ আডবাণী) উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন রাজ্যসভায় মনমোহন সিং বলেছিলেন উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে, তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশ থেকে যে সব সংখ্যালঘু আসছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে উদার হওয়া দরকার।
আমরা শুধু সেটাই করছি যে কথা তিনি (মনমোহন সিং) বলেছিলেন।” মনমোহন সিং দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত।
কংগ্রেসের কপিল সিব্বল বলেন, যাঁদের এই দেশ সম্বন্ধে কোনও ধারনা নেই, তাঁরা এই দেশের ধারনাকে রক্ষা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, “আমি জানি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কোন ইতিহাস বই পড়েছেন। দ্বিজাতিতত্ত্ব আমাদের নয়, এই তত্ত্ব সাভারকরের তৈরি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তিনি যে অভিযোগ এনেছেন তা প্রত্যাহারের জন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি কারণ আমরা এক জাতিতে বিশ্বাসী এবং আপনারা নন।”
লোকসভায় এই বিল প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেছিলেন, যদি নেহরু-লিয়াকত চুক্তি না হত তা হলে এই বিলও কোনও দিন আনতে হত না। তিনি দেশ ভাগের জন্য দায়ী করেছিলেন কংগ্রেসকে। এ দিন তারই উত্তর দেন সিব্বল।
এই বিলকে অসাংবিধানিক বলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদম্বরম। আইনপ্রণেতারা বিষয়টি বিচারবিভাগের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন রাজ্যসভায়।
জবাবি বক্তৃতায় অমিত শাহ বলেন, অনেকেই ভয়ে বলতে পারছিলেন না যে তাঁরা বিদেশি, তাঁদের চাকরি যাওয়ার, ঘর ভাঙার এবং জেল খাটার ভয় ছিল। এখন তাঁরা বুক চিতিয়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে শুধু মুসলমানদের বোঝেন, কিন্তু তাঁদের কাছে ধর্ম নিরপেক্ষতার ব্যাপ্তি আরও বড় বলে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।