নাগরিকত্ব আইন:মমতার দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারিতে গণভোট আমেরিকা বলল ভারতের নিজেদের ব্যাপার

0
321

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নাগরিকত্ব আইনের বিষয়টি একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তা নিয়ে আমেরিকা কোনও নাক গলাবে না। কলকাতা স্থিত চিনা কনসাল জেনারেল ঝা লিউ-ও এ ব্যাপারে বেজিংয়ের একই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন এদিনই।

অথচ, তাঁদের অবস্থানের সঙ্গে চরম বৈপরীত্য তৈরি করে বিষ্যুদবার রানি রাসমণি রোডের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “নাগরিকত্ব আইনের উপর ভারতে গণভোট হোক। আর তা হোক রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে। তখনই বোঝা যাবে এই আইন ক’টা লোক মানছেন, ক’টা লোক মানছেন না।”

দিদির এই মন্তব্যই নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। তার কারণ কী? পর্যবেক্ষকদের মতে, কারণটা পরিষ্কার। ভারতবর্ষ একটি গণতন্ত্র। দলমত নির্বিশেষে দিল্লির সরকারের বরাবরের অবস্থান হল, ঘরোয়া বিষয়আশয় তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে মীমাংসায় সক্ষম ভারত। এ ব্যাপারে বাইরে থেকে কারও নাক গলানো বরদাস্ত করা হবে না।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এ দেশের রাজনীতিতে সম্ভবত শেখ আবদুল্লাহই কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে গণভোটের দাবি জানিয়েছিলেন। নয়াদিল্লি তখনও তা মানেনি। কিন্তু পাকিস্তান আজও তা অস্ত্র করে। যেমন, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরেও রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল পাকিস্তান। আবার নাগরিকত্ব আইন পাশের পরেও জেনেভায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে সম্প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরব হয়েছেন। বলেছেন, নাগরিকত্ব আইনের ফলেও কাশ্মীরের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে।

বস্তুত মুখ্যমন্ত্রী গণভোটের দাবি জানানোর পর থেকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আন্দাজ করছিলেন, বিজেপি মমতার এই মন্তব্য লুফে নিতে চাইবে। তার পর এটাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইবে।

হয়েছেও তাই। বিজেপি মুখপাত্র অমিত মালব্য বলেন, “এ ধরনের কথা তো পাকিস্তান বলবে। ওঁর মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন নেত্রীর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকাই উচিত নয়”। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও বলেছেন, “আমাদের গণতন্ত্র যখন এতটা পরিণত হয়েছে, তখন এ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ দাবি করা ঐতিহাসিক ভুল। তা ছাড়া নাগরিকত্ব আইনটি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত তা খতিয়ে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এখনই তাঁর কথা প্রত্যাহার করে নেওয়া।”

দিদির বক্তব্য বিজেপি যে হাতিয়ার করে নিতে চাইছে তা বুঝতে বাকি নেই তৃণমূলেরও। এই অবস্থায় যুব তৃণমূল সভাপতি যদিও অমিত মালব্যকে জবাব দিয়ে বলেছেন যে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলার সাত কোটি মানুষ রয়েছেন। এবং উনি পর পর দু’বার জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন”। কিন্তু সূত্রের খবর, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে দলের সব নেতাকে বলে দেওয়া হয়েছে, গণভোটের ব্যাপারে কেউ যেন সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ না খোলেন এবং কোনও প্রতিক্রিয়া না দেন। কারণ, আশঙ্কা রয়েছে এটা নিয়ে বিজেপি জলঘোলা করবে।

এখন প্রশ্ন হল, এ ব্যাপারটা আগে কেন মাথায় আসেনি দিদির? বা কোন ভাবনা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণভোটের দাবি তুলেছেন?

তৃণমূলের অনেকের মতে, উনিশের লোকসভা নির্বাচনে দেশের মোট ভোটারের ৩৮ শতাংশের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ভোটার বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। সুতরাং বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে সরকার গড়লেও দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গণভোট হলে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির পরাস্ত হওয়ার কথা। সম্ভবত, এই অঙ্কটা মাথায় নিয়ে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তিনি তা ব্যাখ্যা করেননি।

তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজনীতিতে শব্দই হল ব্রহ্ম। একবার তা মুখ থেকে বেরিয়ে গেলে, পরে ম্যানেজ করা মুশকিল। দেখা যাক, এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দেন!

Previous articleবনগাঁ হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হল
Next articleদেশজুড়ে গণভোট হোক,মমতার সরকারই পড়ে যাবে: মুকুল রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here