দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ থেকে রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হতে চলেছেন দ্রৌপদী মুর্মু।দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে আজ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন দ্রৌপদী মুর্মু । তিনি হবেন দেশের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি । জনজাতি সম্প্রদায়ের কেউ এই প্রথম দেশের প্রথম নাগরিকের মর্যাদা পেতে চলেছেন। তিনি হবেন দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি।
সংসদের সেন্ট্রাল হলে সকাল ১০.১৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা দ্রৌপদীকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। তার আগে রাষ্ট্রীয় রীতি মেনে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং অপেক্ষমান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শোভাযাত্রা সহকারে সংসদে পৌঁছবেন। শপথ গ্রহণের পর নতুন রাষ্ট্রপতি সাংসদদের সামনে ভাষণ দেবেন। তারপর রওনা হবেন রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে।
রাষ্ট্রপতি ভবনের উঠোনে ২১ বার তোপধ্বনী সহকারে গার্ড অফ অনার দেওয়া হবে নতুন রাষ্ট্রপতিকে। স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ পূর্তির মুখে দ্রৌপদীর রাষ্ট্রপতি হওয়ার আর একটি বিশেষ দিক হল, তিনি হলেন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি যাঁর জন্ম স্বাধীনতার পর। ৬৪ বছর বয়সি দ্রৌপদীর জন্ম ১৯৫৮ সালের ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে। এর আগে তিনি ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার আগে ছিলেন ওড়িশা সরকারের একাধিক দফতরের মন্ত্রী। তবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় পুরসভার কাউন্সিলর হিসাবে। একটা সময় শিক্ষকতা করতেন। তারপর ভুবনেশ্বরে ওড়িশা সরকারের সচিবালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি করেছেন। পরে চাকরি ছেড়ে পূর্ণ সময়ের রাজনীতিতে যোগ দেন। দীর্ঘ সময় বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি ছিলেন দ্রৌপদী।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উপ রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, সমস্ত মন্ত্রী এবং সাংসদেরা উপস্থিত থাকবেন। আমন্ত্রিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতিরা।
রাষ্ট্রপতি ভবনে নথিপত্রে স্বাক্ষরের পর রীতি মেনে নতুন রাষ্ট্রপতি সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে তাঁর নতুন বাসভবনে পৌঁছে দেবেন। কোবিন্দের জন্য বরাদ্দ হয়েছে সনিয়া গান্ধীর ১০ জনপথের বাংলো লাগোয়া একটি সরকারি বাড়ি। দেশবাসীর উদ্দেশে গতকাল বিদায়ী ভাষণে কোবিন্দ পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ জোর দেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসী শিল্পীদের পাশাপাশি ডাক পেয়েছেন হুগলির বৈঁচির রেয়ারডাডি লাকচার গাঁওতা সাংস্কৃতিক দল। রবিবার সকালের ট্রেনেই পূর্বা এক্সপ্রেসে চড়ে দলের ২৭ জন সদস্য রওনা হয়ে গিয়েছিলেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। আজ রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকছেন তাঁরা। এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে তাঁরা খুশি
ধামসা, মাদল নিয়ে তাঁরা প্রস্তুত নতুন রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে। চৌষট্টি বছর বয়স দ্রৌপদী মুর্মুর । ১৯৫৮ সালের ২০ জুন জন্ম হয়েছিল দ্রৌপদী মুর্মুর। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের উপরবেদা গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। তারপরে ভুবনেশ্বরের একটি কলেজ থেকে স্নাতক হল তিনি। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, খুব সাধারণ একটি আদিবাসী পরিবারের জন্ম দ্রৌপদী মুর্মুর। তাঁর গ্রামে তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি ভুবনেশ্বরে কলেজে পড়ার জন্য এসেছিলেন।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ অবধি ওড়িশার সেচ ও বিদ্যুৎ দফতরে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন দ্রৌপদী মুর্মু। তারপর ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ অবধি ছিলেন সাম্মানিক সহকারী শিক্ষক। তারপরে ১৯৯৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০০০ ও ২০০৪ সালে ওড়িশার রাইরংপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এনডিএ-র প্রার্থী হয়ে জিতে বিধায়ক হন দ্রৌপদী মুর্মু।
ওড়িশার বিজেপি-বিজেডি জোট সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন তিনি। বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্বও সামলেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল পদে বসেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। তিনি ঝাড়খন্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল ছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি রয়েছে রাজ্যপাল হিসেবে কাজ চালানোর অভিজ্ঞতাও ৷
দলীয় পদ থেকে আইনসভা, সেখান থেকে রাজ্যপালের অফিস। সব স্তরেই দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব সামলেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ১৯৯৭ সালে পুরভোটে জিতে কাউন্সিলর হন তিনি। সেই সঙ্গে রাইরংপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সনের দায়িত্বও পান তিনি।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আজ সকাল ১০:১৫ মিনিটে শপথ নেবেন দেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।